মোঃ শফিকুল ইসলাম, গৌরনদী (বরিশাল) প্রতিনিধিঃ
বেলা গড়াতে গড়াতে যখন সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়ে, নিভে যায় দিনের আলো, চারপাশে নেমে আসে কালো অন্ধকার ঠিক তখনই জমে ওঠে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার একটি ব্যতিক্রমধর্মী হাট। সাধারণ হাটবাজার যেখানে দিনের আলোতেই জমে ওঠে, সেখানে এই হাট শুরু হয় সন্ধ্যার পর!
বরিশাল জেলার দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশদ্বার গৌরনদী উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক সংলগ্ন গৌরনদী পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত এ হাট। টরকী, নীলখোলা ও কসবা সড়কের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এ বাজার। প্রতি হাটে এখানে হাজার হাজার ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম ঘটে। প্রতিদিন চলে কোটি টাকার বেচাকেনা। পানের পাশাপাশি এখানে গড়ে উঠেছে নানা কৃষিপণ্য ও স্থানীয় প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার। এই হাট গৌরনদীসহ আশপাশের অঞ্চলের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। একটি পানের আড়তে প্রতিদিন কাজ করেন প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন শ্রমিক।
‘হযরত শাহজালাল পান আড়ৎ’ এর মালিক মিঠুন মিত্র জানান, সপ্তাহে পাঁচ দিন এখানে হাট বসে। টরকী বাসস্ট্যান্ডের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে নীলখোলা ও কসবা এলাকায় সোম ও বৃহস্পতিবার হাট বন্ধ থাকে, এছাড়া সপ্তাহে ৫ দিন হাট বসে। এখানে যে সব আড়ত রয়েছে এর মধ্যে গাউছিয়া, মোহাম্মাদী, সোনার মদিনা, এলাহী, নিউ সোনার বাংলা, হযরত শাহজালাল , টরকী পান ভাণ্ডার এবং নূর ও নূরানী পান আড়ৎ। প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকার পান কেনাবেচা হয় এ হাটে।
পার্শ্ববর্তী উজিরপুর উপজেলা থেকে পান ক্রয় করতে আসা পাইকার খলিফা নজরুল বলেন, “আমরা এখান থেকে পান কিনে ঢাকা, সিলেট, ফেনী, চৌমুহনীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করি। হাটের মূল আকর্ষণই হচ্ছে পান। আমি নিজেই প্রতিদিন ১০-১২ লাখ টাকার পান কিনি।”
পানচাষি মস্তফা মুন্সী জানান, গৌরনদী ছাড়াও কালকিনি, মাদারীপুর, ডাসার, আগৈলঝাড়া, মুলাদী, উজিরপুরসহ অন্তত ১০-১২ জেলা ও উপজেলা থেকে পান নিয়ে আসেন চাষিরা। বর্তমানে পান আমদানি বেশি হওয়ায় প্রতিপানে দাম পড়ে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। তবে শীতকালে দাম থাকে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। তিনি বলেন, “পান চাষে যে খরচ হয়, উৎপাদনের পর বিক্রি করে ঠিকঠাক লাভ হয় না।”
কৃষি উদ্যোক্তা ও ছাত্রনেতা মো. নুরুদ্দিন বুদ্ধি জানান, পানচাষের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন প্রায় ১ হাজার শ্রমিক। চাহিদা অনুযায়ী তারা দৈনিক ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা মজুরি পান।
গৌরনদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সেকেন্দার শেখ জানান, “উপজেলায় প্রায় ৬৮০ হেক্টর কৃষিজমিতে পান চাষ হচ্ছে। আমরা পানচাষীদের সব ধরনের প্রযুক্তি ও পরামর্শ সেবা দিয়ে থাকি। অন্য বছরের তুলনায় এবার পানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে।”