যশোর প্রতিনিধি : যশোর শুরু হচ্ছে ৩৬ দিনব্যাপী ‘জুলাই স্মৃতি’ উদযাপন কর্মসূচি। ২০২৪ সালের ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে যশোর জেলা প্রশাসক এই বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
সরকার ঘোষিত দেশব্যাপী কর্মসূচির সাথে সমন্বয় করে এবং সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী এসব আয়োজন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১ জুলাই) থেকে শুরু হয়ে আগামী ৫ই আগস্ট পর্যন্ত যশোর জেলা জুড়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান চলবে। যশোরের মতো সারা দেশেও একই ধরনের জাতীয় কর্মসূচি পালিত হবে।
দিবস গুলো উদযাপনের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে একটি ক্যালেন্ডারও প্রকাশিত হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় জেলা কালেক্টরেট চত্বরে গণস্বাক্ষর কর্মসূচির উদ্বোধনের মাধ্যমে এই বৃহৎ আয়োজনের সূচনা হবে।
‘যশোরে ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থান দিবসসমূহ পালন ও জুলাই স্মৃতি’ উদযাপনের লক্ষ্যে গতকাল সোমবার বিকেলে যশোর জেলা কালেক্টরেট ভবনের অমিত্রাক্ষর মিলনায়তনে একটি প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা প্রশাসক মোঃ আজাহারুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় জুলাই যোদ্ধা ও শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। দীর্ঘ আলোচনা ও সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক সিদ্ধান্ত হয়।
মঙ্গলবার (১লা জুলাই) দুপুরে যশোর জেলার সব মসজিদে জুলাই শহীদদের স্মরণে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। জেলা কালেক্টরেট মসজিদে জোহর নামাজের পর দোয়া এ কর্মসূচি পালন হবে, যেখানে জেলা প্রশাসক সহ সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তারা যোগ দেবেন। অন্য ধর্মাবলম্বীরা তাদের নিজ নিজ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সুবিধামত সময়ে প্রার্থনার আয়োজন করবেন।
এছাড়াও, ১৪ই জুলাই শহীদ স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হবে। ১৭ই জুলাই সদর শহরের চাঁচড়া মোড় থেকে টাউন হল ময়দান পর্যন্ত প্রতীকী কফিন মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। ১৮ই জুলাই অন্যান্য কর্মসূচির পাশাপাশি যশোর পালবাড়ি মোড় থেকে চাঁচড়া হয়ে টাউন হল ময়দান পর্যন্ত ম্যারাথন দৌড় হবে। এছাড়াও ১লা জুলাই ‘জুলাই ক্যালেন্ডার’ প্রকাশ, ৫ই জুলাই আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদে পোস্টারিং, ১৪ই জুলাই যশোর সদর শহরের বকুলতলায় ‘জুলাই শহিদ স্মৃতিস্তম্ভ’ স্থাপন, একইদিনে শিল্পকলা একাডেমিতে জুলাই বিষয়ক ভিডিও প্রদর্শনী, ১৫ই জুলাই যশোর জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান, ২২শে জুলাই জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে কবিতা আবৃত্তি, ২৩শে জুলাই সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রাফিতি প্রতিযোগিতা, ২৪শে জুলাই শিশু শহীদ দের স্মরণে ‘২৪-এর রঙে’ গ্রাফিতি ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, ২৫শে জুলাই শিল্পকলা একাডেমিতে ‘বিপ্লব’ শীর্ষক নাটক মঞ্চায়ন, ২৮শে জুলাই রক্তদান কর্মসূচি, মেডিক্যাল ক্যাম্প এবং স্বাস্থ্য সেবকদের নিয়ে আলোচনা সভা, ৩০শে জুলাই ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সাংবাদিকদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা, ৩১শে জুলাই ‘জুলাইয়ের মায়েরা’ শীর্ষক আলোচনা, ৩২ জুলাই রিকশায় গ্রাফিতি অঙ্কন ও রিকশা মিছিল, ৩৫ জুলাই যশোর বকুলতলায় শহিদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণের কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়াও সভায় মাসব্যাপী শহরের দড়াটানা মোড়ে ‘জুলাই ডকুমেন্টারি’ প্রদর্শন, নতুন গ্রাফিতি নির্মাণ এবং পুরাতন গ্রাফিতি সংস্কারের প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়।
পাশপাশি জুলাই মাসের এই ৩৬ দিনব্যাপী কর্মসূচিতে প্রায় প্রতিদিনই গ্রাফিতি প্রতিযোগিতা, রিকশা মিছিল, শিশুদের অনুষ্ঠান, নাট্য অনুষ্ঠান, কবিতা আবৃত্তি, আলোচনা, দোওয়া মোনাজাতসহ নানা ধরনের আয়োজন থাকবে। এই সকল অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি হবে ৫ আগস্ট (৩৬ জুলাই)।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক ও পৌর প্রশাসক রফিকুল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নাজিবুল আলম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সুজন সরকার, জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম শাহীন, যশোর আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবু মোর্ত্তজা ছোটো, চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মিজানুর রহমান খান, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন, জামায়াতে ইসলামের জেলা আমীর অধ্যাপক গোলাম রসুল, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলার প্রধান সমন্বয়ক রাশেদ খানসহ শহীদ পরিবারের প্রতিনিধি, জুলাই যোদ্ধা এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা গন।