অরবিন্দ রায়, স্টাফ রিপোর্টঃ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম শ্রী শ্রী লক্ষী পূজা সোমবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে লক্ষী পূজা করা হয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, যে বাড়িতে মা লক্ষ্মী থাকে সেই বাড়িতে সর্বদা সুখ- শান্তিতে ভরে থাকে। জীবনে চলার পথে তাদের কখনো অন্যবস্ত্রের অভাব হয় না।
লক্ষ্মী দেবী সম্পদ ও সমৃদ্ধির দেবী। লক্ষী দেবী ভক্তদের সৌভাগ্য এবং আশীর্বাদ প্রদান করেন। দেবীকে স্বাগতম জানাতে ভক্তরা তাদের ঘর পরিষ্কার করে ও আলো দিয়ে ঘর সজ্জিত করে। নৈবেদ্য হিসেবে মিষ্টি জাতীয় খাবার ও সুস্বাদু খাবার প্রস্তুত করে। ভক্তরা বিশ্বাস করেন, দেবী লক্ষ্মী দর্শনের সময় যত খুশি হন, তত বেশি তিনি আর্শীবাদ করেন।
মা লক্ষ্মীর পায়ের ছাপ বা আলপনা ঘরে ভিতর থেকে বাহির পর্যন্ত আঁকতে হয়। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, পায়ের ছাপ দেখে মা লক্ষ্মী ঘরে প্রবেশ করে। লক্ষী দেবী ভরা জ্যোৎস্নায় পেঁচাকের সঙ্গে নিয়ে মর্ত্যে আসেন। লক্ষ্মী দেবী বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঘুরে দেখতে যান কে তাঁর জন্য রাত জেগে অপেক্ষা করছে। এ কারণে লক্ষ্মীপূজা সন্ধ্যার পর থেকে অনুষ্ঠিত হয়।
শ্রী শ্রী মা লক্ষ্মীর পুজায় ধান, কয়েন, পান, করি, হলুদ, ঘট হট, আতপ চাল, দই, মধু, চিনি, ঘি,সহ প্রায় সব কয়টি উপাদানই সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পুরান মতে, মা লক্ষী নারায়নের জীবন সঙ্গী সেই কারনে সিঁদুর, হরিতকী, কর্পূর, ঘট, ধরে গামছা, হাড়ি, পঞ্চগব্য, পঞ্চরত্ন, শিসযুক্ত ডাব, ফল, দুর্বা, বাটি, তিরকাঠি,লক্ষী পুজার সময় লাগে।
শারদ পূর্ণিমায় সময় দেবী লক্ষ্মীর আবিভূত হয়েছিলেন। শারদ পূর্ণিমারা উৎসবটিকে দেবীর জন্মবার্ষিকী হিসেবে পালন করা হয়। শারদ পুর্নিমার দিনে রাত্রি জাগরণে করে দেবী লক্ষী ও ভগবান বিষ্ণুর পুজা করলে অর্থ ও খাদ্যের অভার হয় না । শারদ পূর্ণিমা রাতে অমৃত বর্ষণ হয়, তাই রাতে চাঁদের আলোয় খির দিয়ে দেবী লক্ষীকে নিবেদন করা হয়। সনাতন ধর্মের মানুষ বিশ্বাস করেন, লক্ষী পুজা করলে চিরকাল ঘরে লক্ষ্মীর আশীর্বাদ থাকে ।
প্রতি বছর পূর্ণিমা তিথিতে সারা দেশে হিন্দুদের ঘরে ঘরে আনন্দমুখর পরিবেশে লক্ষী পুজা উদযাপন করা হয়। । দেবী লক্ষ্মীর কৃপা লাভের আশায় ভক্তরা নানা আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেবীকে আহ্বান জানায়। এ বছর পূর্ণিমা তিথি শুরু হয় সোমবার (৬ অক্টোবর) দুপুর ১১টা ৫৪ মিনিটে এবং শেষ হবে মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সকাল ১০টা ১ মিনিটে।পূর্ণিমা তিথিতেই শ্রীশ্রী লক্ষ্মীদেবীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
গ্রামগঞ্জ থেকে শুরু করে শহরের অলিগলি— ঘর থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্লাব ও সংগঠনের পক্ষ থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষ লক্ষী পুজা করে থাকে । ঘর বাড়ি পরিষ্কার করা , আলপনা আঁকা, মুড়ি, চিড়ার মোয়া, নারিকেলের নাড়ু, তিলের নাড়ু, সন্দেশসহ নানা রকমের মিষ্টান্ন তৈরীতে নারীরা ব্যস্ত থাকে ।
সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করে আশ্বিনের পূর্ণিমায় দেবী লক্ষ্মী ধন, সমৃদ্ধি ও কল্যাণের আশীর্বাদ নিয়ে গৃহে আগমন করেন। গৃহস্থালির সুখ-শান্তির প্রতীক এই পূজায় গৃহলক্ষ্মী হিসেবে নারীরাও দেবী রূপে পূজিত হয়।
পূজার রাতে ঘরে-ঘরে দীপ জ্বালিয়ে ‘আলোয় ভরবে আশার ঘর’—এই কামনায় ভক্তরা প্রার্থনা জানাবেন । শান্তি, ধন-সম্পদ ও পারিবারিক মঙ্গল লাভের আশায় লক্ষ্মীদেবীর কাছে নানা উপাচার নিবেদন করা হবে ।
সনাতন ধর্মাবলম্বী সকল মানুষের জীবনে লক্ষ্মীপূজা বয়ে আনুক শান্তি ও সমৃদ্ধি—এ প্রত্যাশা করে থাকেন । মা লক্ষী সমৃদ্ধির দেবী। সনাতন ধর্মের মানুষের ঘরে ঘরে বইছে উৎসব আমেজ। কোনো কোনো এলাকায় বড় করে প্রতিমা তৈরী করে লক্ষী পুজা করা হয়।