
জাহিদুল ইসলাম, কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধিঃ ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস আর লবণাক্ততার করাল গ্রাসে বারবার বিপর্যস্ত খুলনা উপকূলের কয়রা জনপদে এবার একজোট হয়েছে সরকারি সংস্থা ও বেসরকারি অংশীদাররা। প্রকৃতির রুদ্ররূপ মোকাবিলার কৌশল নির্ধারণ এবং টেকসই জীবন-জীবিকা নিশ্চিত করতে এক ভিন্নধর্মী কর্মশালায় মিলিত হন তারা।

রোববার (২৬ অক্টোবর) বেলা ১১টায় বিআরডিবি হলরুমে অনুষ্ঠিত এই কর্মশালায় মূল এজেন্ডা ছিল – কিভাবে জলবায়ু সহনশীল অনুশীলনকে স্থানীয় জীবনে ও প্রশাসনে গেঁথে দেওয়া যায়।
দাতা সংস্থা হেলভেটাস সুইস ইন্টারকোঅপারেশন বাংলাদেশ-এর সহযোগিতায় এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা উত্তরণ-এর ‘এক্সসেস প্রকল্প’-এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই বৈঠক উপকূলীয় সংকট মোকাবিলায় এক নতুন ঐক্যের বার্তা দিয়েছে।
কর্মশালায় উপস্থিত সরকারি কর্মকর্তারা জলবায়ু-সহনশীলতার গুরুত্ব অনুধাবন করে জানান, এখন থেকে প্রতিটি উন্নয়ন পরিকল্পনাতেই দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস ও পরিবেশবান্ধব কৌশলকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। বিশেষ করে, জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনার ক্ষেত্রে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে আধুনিক ও সহনশীল পদ্ধতি অবলম্বনের ওপর জোর দেওয়া হয়।
উত্তরণের এক্সসেস প্রকল্পের উপজেলা কো-অর্ডিনেটর ফয়সাল মন্ডলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই গুরুত্বপূর্ণ কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. শুভ বিশ্বাস। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মামুনর রশীদ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী ইস্তিয়াক আহমেদ এবং পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার সরকার। প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিদের উপস্থিতি স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে।
এছাড়াও, কয়রা উপজেলা পানি কমিটির সভাপতি এইচ এম শাহাবুদ্দীন, সাধারণ সম্পাদক শেখ মনিরুজ্জামান মনু এবং সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেনের মতো সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রমাণ করে, দুর্যোগ মোকাবিলার এই লড়াই কেবল সরকারের একার নয়, এটি সর্বস্তরের মানুষের সম্মিলিত দায়িত্ব।
কর্মশালার সঞ্চালনায় ছিলেন প্রকল্পের কৃষি লাইভলিহুড কর্মকর্তা এনামুল হক। তিনি উল্লেখ করেন, স্থানীয় বীজ ও সার ব্যবসায়ী, কাঁকড়া চাষী, ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধি ও ইয়ুথ গ্রুপের মতো তৃণমূলের অংশীদারদের সরাসরি সম্পৃক্ত করাই এই কর্মশালার প্রধান লক্ষ্য ছিল। কারণ, জলবায়ু সহনশীলতার প্রয়োগে তারাই প্রথম সারির যোদ্ধা। সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন এক্সসেস প্রকল্পের আরাফাত হোসেন ও সখিনা পারভিন প্রমুখ।
স্থানীয় জনসাধারণের মতে, এই ধরনের সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ কয়রার মতো ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষের জীবন ও জীবিকাকে প্রকৃতির প্রতিকূলতা থেকে সুরক্ষিত রাখতে একটি মজবুত ঢাল হিসেবে কাজ করবে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে কয়রা মডেল দেশের অন্যান্য উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে।