মোঃ রবিউল ইসলাম সিয়াম :
‘আমাদের সাধ্যের মধ্যে চলতে হবে। রাজনৈতিক সরকারের যেমন কাউকে খুশি করতে হয়, আমাদের তেমন কাউকে খুশি করার কিছু নেই’ বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
তিনি বলেন, ‘কাউকে খুশি করতে কোথাও চারটি লাইনের জায়গায় ছয়টি, আবার ছয়টিয় জায়গায় দশটি লাইন দিতে হবে না। এখন দেখা গেল, সামর্থ্য আছে ২০টা প্রকল্প করার কিন্তু শুরু হয়েছে ৫০টি। এটার টাকা কীভাবে আসবে? তাই চলমান প্রকল্পগুলো কী করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করা হবে। কারণ, অতিরিক্ত প্রকল্পের কারণে দেখা যায়, কোনোটাই সম্পন্ন হয় না।’
শনিবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে ধামরাই উপজেলার সোমভাগ ইউনিয়নের শৈলান প্রবীন নিবাসের সার্বিক কার্যক্রম পরিদর্শনের পর সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, আগে আমাদের রাজনৈতিক দর্শন ছিল সব রাজনীতির সাপেক্ষে হবে। রাজধানীতে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ দিতে হবে। রাজধানীতে ২৪ ঘণ্টা গ্যাস দিতে হবে। রাজধানীতে ২৪ ঘণ্টা পানি দিতে হবে, সবকিছু করতে হবে। তবে এখন আমাদের সেখান থেকে সরে আসতে হবে। আমরা এখানে একটা রিজিওনাল আঞ্চলিক বৈষম্য কমিয়ে আনার চেষ্টা করব।’
তিনি বলেন, ‘লোডশেডিং যদি হয়, তাহলে ঢাকায় হবে না কেন? যেগুলো কেপিআই আছে সেগুলো না হয় বাদ গেল কিন্তু লোডশেডিংয়ের মাত্রা একটু দেখতে হবে। যেন গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ পায়। আপনি লাইন দিচ্ছেন, মিটার রেট করছেন, টাকা দিচ্ছেন, বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না। এটা তো কোনো কাজের কথা না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগে রাজনৈতিক দর্শন ছিল আপনি ঢাকা শান্ত রাখতে পারলে সব কিছু শান্ত। আসলে সেই কথা তো ঠিক না। ঢাকার বাইরে তো মানুষ আছে, বিদ্যুতের প্রয়োজন আছে, গ্যাসের প্রয়োজন আছে।’
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, অন্য সরকারের সাথে আমাদের পার্থক্য হচ্ছে, আমাদের তো আর কারো কাছে দায়ি নাই। দায়িত্ব হচ্ছে, ছাত্র-জনতা যারা মারা গেছে তাদের প্রতি। যারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে তাদের প্রতি। তাদের পরিবারের প্রতি। এছাড়া আমাদের অন্য কোনো কারো কাছে কিন্তু দায়ি নই। সুতরাং ট্রান্সপারেন্সি আপনি ওখানে এক কথা বলবেন, গ্রাহক এক কথা বলবেন, আর আমাদের কর্মকর্তা কর্মচারী আরেক কথা বলবেন, এটা হবে না।’
প্রবীণ নিবাসের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সমস্যা হলে সামনাসামনি কথা হবে, মুখোমুখি হবে, সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবো। আমরা কিন্তু এত বিত্তশালী লোক না। তো যাই হোক, আমরা জমিটা একটা ট্রাস্টকে দিয়ে দিয়েছি। নিজেদের কিছু সঞ্চয় ছিল। সেই টাকা দিয়ে ট্রাস্টটা শুরু করেছি। এই তালিকায় যারা আছেন উনারা কিন্তু প্রধান। এই টাকাটা উনাদের কাছে। এখন সরকারের বিষয়টা হচ্ছে, কারো কোনো অনুরাগ বা বিরোধে চোখ রাখা। এটাকে সমাজ কল্যাণ অধিদপ্তরের রেজিস্ট্রেশন নিয়েছি। জয়েন স্টক রেজিস্ট্রেশন নিছি, এনজিও ব্যুরো রেজিস্ট্রেশন অনুমোদন হয়ে রয়েছে। সুতরাং নীতিমালা অনুযায়ী অন্য সংস্থা প্রতিনিধিদের যা দেয় আমরা সেটার বেশি কিন্তু আশা করি নাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখানে একটা প্রবীণ নিবাস হয়েছে। আমরা এটা একটা মডেল মনে করে এটার ধারণা নিয়ে অন্য প্রত্যেকটি উপজেলা প্রত্যেকটি জেলা অন্তত বিভাগে একটা নিবাস করার চেষ্টা করব। তবে রাগ কিংবা অনুরাগের বশবর্তী হয়ে কোনো কাজ করতে পারব না।’
এ সময় তার সফরসঙ্গী হিসেবে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর রিজওয়ান খান, বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমান, টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মনিরা সুলতানাসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।