সম্রাট আলাউদ্দিন, ধামরাই (ঢাকা) : দুই দিন আগেও যেখানে সোনালি ধান দোল খেতো। সেখানেই এখন পুড়ে যাওয়া ধূসর ক্ষেত। ছড়াগুলো পুড়ে লালচে হয়েছে, আর পাতাগুলোর অবস্থা কালচে। পুড়ে যাওয়া ধানের জমির ছড়াগুলোর ধান সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে।
ঢাকার ধামরাইয়ে ইটভাটার ছেড়ে দেওয়া গ্যাসে উপজেলার অন্তত তিনটি এলাকায় শতাধিক হেক্টর জমির ধান পুড়ে গেছে। এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা। অবিলম্বে ইটভাটা মালিকদের কাছে ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন তারা। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কৃষি অধিদপ্তর। উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর জানায়, এ বছর ধামরাইয়ে ১৬,৯৯৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। এরমধ্যে গত কয়েক দিনে ইট ভাটার ছেড়ে দেওয়া গ্যাসে অন্তত ১২০ হেক্টর জমির ধান সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। এরমধ্যে উপজেলার আমতা ইউনিয়নের বড় নারায়নপুরে আরবিসি নামে ইটভাটার গ্যাসে অন্তত ৫০ থেকে ৬০ হেক্টর, সানোড়া ইউনিয়নের বাসনা নয়াপাড়া এলাকায় টাটা ব্রিকসের গ্যাসে অন্তত ৩০ হেক্টর ও সোমভাগ ইউনিয়নের কালামপুরে অন্তত ২৫ হেক্টর জমির ধান পুড়ে যায়।বোরো মৌসুমের ফসল তোলার দুই সপ্তাহ আগে ধানের এমন ক্ষতিতে বিক্ষুব্ধ কৃষকরা।
এজন্য ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন তারা। বড় নারায়ণপুর এলাকায় কৃষক মো. লাবু মিয়া (৪০) বলেন, গত শনিবার আরবিসি ইটভাটার গ্যাস ছাড়া হয়। এ কারণে বড় নারায়ণপুর চকের প্রায় অর্ধেকেরই ধান পুড়ে যায়। একেবারে হওয়া ধান। আমারও প্রায় ২০০ শতাংশ জমির ধান সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। ধান দেখিয়ে তিনি বলেন, এই ধানগুলো আর দুই সপ্তাহের মধ্যে কাটা যেতো। এখন দুধ হয়েছিল। গ্যাসের তাপে সব পুড়ে গেছে। ধানে শক্তি যোগায় পাতা, পাতাগুলোও কালচে হয়ে গেছে। সোনালি রঙের ক্ষেত পুরো রঙই বদলে গেছে। মো.গোলাপ হোসেন (৪২) নামে আরেক কৃষক বলেন, গত শনিবার ইট ভাটার গ্যাস ছাড়ার কারণে সারা বড়নারায়ণপুরের ধানি জমির সব ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আমরা ক্ষতিপূরণ চাই। আমি ৩৩ শতাংশ জমিতে চাষ করেছিলাম। সব শেষ এখন।
বাসনা এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আমজাদ হোসেন বলেন, আমাদের এই চকের অনেক জমির ধান পুড়ে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। আমি গরিব মানুষ। ৪৭ শতাংশ জমি টাকায় রেখে চাষ করেছি। পুরো জমির ধানই গ্যাসে পুড়ে গেছে। আমার বছরের খাবার নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষতিপূরণ পেলে হয়তো কিছুটা পোষাবে। কিন্তু এটার পুরাপুরি ক্ষতিপূরণ আসলে সম্ভব না। ক্ষেত দেখলেই কান্না আসছে। আমার স্ত্রী ক্ষেতের দিকে আসেইনি। ইটভাটার গ্যাসে এমন ক্ষতির বিচার কার কাছে চাইব?এদিকে ধামরাইয়ে ইটভাটার গ্যাসে ক্ষতিগ্রস্ত ধান ক্ষেতগুলো পরিদর্শন করেন উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. আরিফুর রহমান। দ্রুত ক্ষতিপূরণসহ যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।কৃষিবিদ মো. আরিফুর রহমান বলেন, বছরের সবচেয়ে বড় মৌসুম রবি মৌসুম। এ মৌসুমে কৃষক সবচেয়ে বড় ফসল পান বোরো ধান। সারা বছর এই ধানে তাদের সংসার চলে। ভাতের সবচেয়ে বড় যোগান আসে এই বোরো মৌসুমে।
এ বছর ধামরাইয়ে আবহাওয়া অনুকূলে ও পোকামাকড় না থাকায় রেকর্ড পরিমাণ ফলন হয়েছিল। হঠাৎ করে গত দুই তিন দিনে উপজেলার কয়েকটি জায়গায় খবর পেলাম ইট ভাটার চুল্লি বন্ধ করে দিয়েছে, যে কারণে ওই ধোয়া এসে ধান পুড়ে গেছে। আরও দুইটি জায়গায় ২০-২৫ হেক্টর করে জমি ও এখানে ১০০ হেক্টরের মতো জমি পুড়ে গেছে। এখানে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এখানে এখন পর্যন্ত ধান পরিপুষ্ট হয়নি। আরও মাস খানেক সময় লাগতো। যেহেতু পাতা পুড়ে গেছে, ফলে এগুলো পুনরায় সজিব হওয়ার সম্ভাবনা কম। কৃষকদের বললাম, মাটিতে পানি ধরে রাখতে, তাতে যদি পাতা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে পরিপুষ্টতা আছে। তিনি বলেন, এটা আসলে একটা বড় চ্যালেঞ্জ।
ধামরাইয়ে কৃষি থাকবে, নাকি ইট ভাটা। ইট ভাটার কারণে ফল হচ্ছে না, ফুল ঝরে পড়ছে। অন্যান্য ফসল নষ্ট হচ্ছে। প্রতি বছর এভাবে ধান পুড়ে যায়। কৃষক যখন এমন ফসল দেখেন, এটার আর্থিক ক্ষতিপূরণ সম্ভব নয়। এটি দেশেরও সম্পদ। টাকা দিয়ে কারখানায় বানানো সম্ভব নয়। ফলে এটার স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। যাতে এভাবে কৃষকের ফসল না পুড়ে যায়।ধামরাইয়ে অবৈধ অন্তত দেড় শতাধিকসহ দুই শতাধিক ইটভাটা রয়েছে। এতে প্রতি বছরই ধানসহ বিভিন্ন ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিঘ্ন ঘটছে পরাগায়নেও। অবিলম্বে এসব ইটভাটা বন্ধের দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।