
জাহিদুল ইসলাম, কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার জাতীয় নির্বাচনের আগে ‘পিআর পদ্ধতি’ (Proportional Representation বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি)-কে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ‘জুলাই সনদ’-এ অন্তর্ভুক্ত করে তার আলোকে গণভোট দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তিনি কঠোর ভাষায় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের গোপন পথ ছেড়ে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে মনোযোগ দিতে হবে।

গতকাল শনিবার (১১ অক্টোবর) খুলনা জেলার পাইকগাছা সরকারি কলেজ এবং কয়রা কপোতাক্ষ কলেজ মাঠে স্থানীয় জামায়াতে ইসলামি কয়রা উপজেলা শাখা কতৃক আয়োজিত পৃথক দু’টি ছাত্র-যুব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ দাবি জানান।
অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষপাতিত্ব ও প্রশাসনের অস্থিরতা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কতিপয় উপদেষ্টার মধ্যে পক্ষপাতিত্ব লক্ষ্য করা যাচ্ছে উল্লেখ করে জামায়াত সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, “নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অস্থিরতা বাড়ছে। দু’একজন উপদেষ্টা এবং প্রশাসন গোপনে গোপনে ষড়যন্ত্র করে একটি দলকে ক্ষমতায় নেওয়ার চেষ্টা করছে। তারা কেমন যেন একটা চাপের মধ্যে আছে।” তিনি চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের গোপন পথ পরিহার করে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার স্বার্থে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন।
পিআর পদ্ধতি ও ৫ দফা দাবি
সরকারের উদ্দেশে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “পিআর পদ্ধতিকে জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত করে তার আলোকে গণভোট দিয়েই জাতীয় নির্বাচন দিন। জনগণ পিআর পদ্ধতি মেনে নিলে তার আলোকেই নির্বাচন মেনে নিতে হবে।”
এছাড়া, নির্বাচনের আগেই প্রশাসনের নিরপেক্ষতা প্রমাণ, ১৪ দলীয় জোটের ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকারকে টিকিয়ে রাখাদের বিচার দৃশ্যমান করা এবং জামায়াতের ৫ দফা মেনে নিয়ে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানান তিনি।
ফ্যাসিবাদ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘দ্বিতীয় যুদ্ধ’ অধ্যাপক পরওয়ার তার বক্তব্যে ছাত্র-জনতাকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “চব্বিশের গণআন্দোলনের ছাত্র-জনতার যুদ্ধ ছিল ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। আর আমাদের দ্বিতীয় যুদ্ধ হলো দুর্নীতির বিরুদ্ধে।” তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে ইসলামের পক্ষের শক্তিকে নির্বাচিত করে ‘দ্বিতীয় যুদ্ধ’ জয়ের আহ্বান জানান। বিগত সময়ে জামায়াতে ইসলামী মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকাকালীন কোনো দুর্নীতি হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, “এদেশের মানুষ সব দলকে দেখেছে, এবার ইসলাম পন্থী নির্বাচিত করে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে ইনশাআল্লাহ।”
ছাত্রশিবির কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল কঠোর সমালোচনা
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর একটি রাজনৈতিক দল মনে করেছিল আগের মতো যেনতেন নির্বাচনের মাধ্যমে তারা যে কোনো মূল্যে ক্ষমতায় চলে যাবে। তিনি অভিযোগ করেন, “ফ্যাসিবাদের আমলে যত না তাদের নেতাকর্মী খুন হয়েছে, তার চেয়ে বেশি অন্তর্কলহে ৫ আগস্টের পর দলীয় নেতাকর্মী খুন হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বার বার ভোট বিপর্যয় ঘটায় ওই দলটি এখন আর ভোটে আসতে ভয় পাচ্ছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন না দেওয়ার কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন—আগে জাতীয় নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতায় গিয়ে কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করা। তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন, মানুষ এখন পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছে এবং সেই জোয়ারে নেতৃত্ব দেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
খুলনা-৬ আসনের প্রার্থীর ২০ দফা ইশতেহার
খুলনা-৬ আসনের জামায়াত মনোনীত এমপি প্রার্থী ও জামায়াতের খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলা নিয়ে ‘সুন্দরবন জেলা’ গঠনসহ ২০ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, জামায়াতের নেতৃত্বে ইসলামী জোট রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে কয়রা-পাইকগাছার যোগাযোগের দুরাবস্থা দূর করা হবে। যারা পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের সমালোচনা করছেন, তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “যারা পিআর বোঝেন না তাদের রাজনীতি করার কিংবা ক্ষমতায় যাওয়ার দরকার নেই।” তিনি প্রবাসীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান এবং ১৮ সালের নির্বাচনের আগে তাকে গ্রেপ্তারের ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, একটি বিশেষ দল ২৬ সালের উৎসবমুখর নির্বাচন বানচাল করার পায়তারা চালাচ্ছে।
পাইকগাছা উপজেলা আমীর মাওলানা সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং কয়রা উপজেলা আমীর মাওলানা মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে পৃথক এ সমাবেশে জামায়াত ও সহযোগী সংগঠনের স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তৃতা করেন। সমাবেশ শেষে জামায়াতের নেতৃবৃন্দ এলাকার উন্নয়নে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।