সম্রাট আলাউদ্দিন, ধামরাই (ঢাকা) : ঢাকার ধামরাইয়ে অর্থ বাজেট ও পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ২০ শয্যার সরকারি হাসপাতাল আজ ধ্বংসের মুখে। ভেঙে পড়েছে পলেস্তার, দরজা, জানালা। নির্মাণের ১৮ বছর পেরিয়ে গেলেও চিকিৎসা সেবার সুফল পান নি স্থানীয় সাধারণ জনগণ। নষ্ট হচ্ছে সরকারের কোটি টাকা মূল্যের আধুনিক ভবন। ২০০৬ সালের ৩ নভেম্বর ৪ একর জায়গার উপর হাসপাতালটি নির্মিত হয়েছে হাসপাতালটি। বর্তমানে চালু হওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই।
হাসপাতালে নেই কোন ডাক্তার, নার্স। নেই কোন চিকিৎসা পত্র। রোগী আসে না,আসলেও কোন চিকিৎসা সেবা দেওয়ার সুযোগ নেই। হাসপাতালে কোন ঔষধ পত্র নেই। নিরাপত্তার জন্য নেই কোন নিরাপত্তা প্রহরী। সব সময় হাসপাতালটির প্রধান ফটকের ছোট গেট খোলা থাকে। হাসপাতালের সামনেই স্থানীয়দের গোবর শুকাতে দেখা যায়। মাঠে দেখা যায় গবাদি পশু চারণ করতে। ডাক্তারদের আবাসিক ভবনের সামনে রয়েছে ময়লা আবর্জনা ও গোবর। দুপুর গড়িয়ে বিকেল বা সন্ধ্যা হলেই মাদকসেবিদের আড্ডা চলে। স্থানীয় সাধারণ জনগণ দেখার পরও কিছু বলতে সাহস পায় না।
এমন দৃশ্য দেখা যায়, উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল রোয়াইল ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর এলাকায়। ২০০৬ সালের ৩ নভেম্বর ঔই ২০ শয্যার হাসপাতালটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের নির্মাণ ও রক্ষাণাবেক্ষণের ব্যবস্থাপনা ইউনিটের প্রধান প্রকৌশলী কর্নের মো: ফজলুর রশিদ মৃধা( পিএসসি) । তিনি ঔই গ্রামেরই সন্তান।সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ২০ শস্যা বিশিষ্ট সরকারি হাসপাতালটি বেশিরভাগ সময়ই বন্ধ থাকে। আলমগীর হোসেন নামে একজন মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট নিয়োজিত রয়েছেন। তিনিও নিয়মিত আসেন না। প্রতি সপ্তাহে এক দুই দিন আসেন। আবার দুই এক ঘন্টা থাকার পর চলে যান। নিরাপত্তা প্রহরী না থাকায় যে কেউ অনায়াসে প্রবেশ করছে হাসপাতালের ভিতর। মূল হাসপাতালটির দরজার গ্লাস ভেঙে পড়ছে, বৈদ্যুতিক খুঁটি ও বাল্ব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ডাক্তার নার্সদের থাকার আবাসিক ভবনগুলোর ভিতরে চলে মাদকের আড্ডা।একটি আবাসিক ভবনের ভিতর দেখা যায়, বিড়ি সিগারেটের প্যাকেট, মদের বোতল ও ইনজেকশনের সিরিজ।
ভবনের ভিতর থেকে বেশির ভাগ বৈদ্যুতিক পাখা, তার ও বাল্ব নিয়ে গেছে দুষ্কৃতকারীরা।স্থানীয়দের দাবি হাসপাতাল না হয় গার্মেন্টস হলেও কাজ করে খাওয়া যেত। কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, আমরা অনেক দূরে গিয়ে পড়াশোনা করি। হাসপাতালটি চালু না হলে যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হয় তাহলেও অনেক উপকার হবে। তাছাড়া এই হাসপাতাল ধ্বংস হয়ে যাবে,পরিনত হবে মাদকসেবিদের আড্ডা খানা। আমরা মানুষের সেবার জন্য জায়গা দিয়েছি। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত কোন সেবা ১৮ বছর পেরিয়ে গেলেও পাই নি।৭ম শ্রেনির শিক্ষার্থী রাজু আহমেদ বলেন, হাসপাতালের কোন কার্যক্রম নেই। একজন লোক সপ্তাহে দুই একদিন আসেন। কিছু সময় থেকে চলে যায়। চিকিৎসা নিতে গেলে বলেন, আপনারা এখানে আসেন কেন। কোন ঔষধ পত্র নাই। যারা আসেন তারা বলেন, আমরা শুধু উপস্থিতি দেখানোর জন্য আসি, তাছাড়া চাকরি চলে যাবে।অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাইসুল ইসলাম ইফাত বলেন, হাসপাতাল থাকার দরকারটা কি যদি চিকিৎসাই দিতে না পারে। তার চলে স্কুল করে দিলে আমরা পড়াশোনা করতে পারবো। গাড়ি ভাড়া দিয়ে আর দূরে যেতে হবে। তাছাড়া গার্মেন্টস করে দিলে মানুষ চাকরি করতে পারবে।৭০ বছরের বৃদ্ধ নুরুল ইসলাম বলেন, হাসপাতাল নির্মাণের পর আজও চালু হয় নি।
এভাবেই পরে আছে। ডাক্তার আসে কোন চিকিৎসা দেয় না। এসেই চলে যায়।শহিদুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালটি ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আজও চালু হয় নি। হাসপাতালটি চালু হলে সাধারণ জনগণকে আর সাভার, মানিকগঞ্জ গিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। আর চালু না হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করা হোক। তারপরও যেন কোটি টাকার হাসপাতালটি ধ্বংসের হাত থেকে বেঁচে যায়।আরিফুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালটি আজও চালু হয় নি। ডাক্তার হঠাৎ করে আসে। কোন ঔষধ পত্র নাই। বিকেলের দিকে বহিরাগত লোকজন আসে রাত পর্যন্ত থাকে। মাদকের আড্ডা বসে। স্থানীয়রা কেউ কোন কথা বলতে সাহস পায় না সব জানার পরও। ডাক্তারদের থাকার যে ভবনগুলো রয়েছে সেখানে শুধু মাদকের চিহ্ন রয়েছে।
দ্রুত হাসপাতালটি চালু করা দরকার। হাসপাতাল নিয়ে প্রশাসনের সু দৃষ্টি কামনা করছি। তাছাড়া ছোট বাচ্চা ও স্থানীয়রা এক সময় মাদকের সাথে জড়িত হয়ে পড়বে।মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট আলমগীর হোসেন বলেন, এই হাসপাতাল ও ঔষধ পত্রের জন্য কোন বরাদ্দ নেই। নেইকোন নিরাপত্তা প্রহরী। চারপাশের দেয়ারের নিচে দিয়ে লোকজন ভিতরে চলে আসে। তদারকির লোকজন না থাকায় মাদকসেবিদের আড্ডার জায়গা হয়ে উঠেছে। যদি হাসপাতালটি চালু করা যেত একদিকে কোটি টাকার ভবন ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পেত অপরদিকে স্থানীয় গরীব অসহায় লোকজনের জন্য চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা যেত। কৃষ্ণ নগর গ্রামের লোকজন সঠিক চিকিৎসা পেত। অর্থ বাজেট না থাকায় কোন ঔষধ দিতে পারি না। তবে আলমগীর হোসেন ডাক্তার আসার কথা স্বীকার করলেও চিকিৎসা দিতে পারেন না তাও স্বীকার করেন।মাদকের বিষয়টি তিনি স্বীকার করেন। গেইটে পাহারাদার না থাকায় লোকজন অবাধে বিচরণ করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: নূর রিফফাত আরা বলেন, অন্তবিভাগের জন্য বরাদ্দ না থাকায় অন্ত: বিভাগ বন্ধ রয়েছে। কিন্তু আউটডোর চালু আছে।