সম্রাট আলাউদ্দিন, ধামরাই (ঢাকা) : ঢাকার ধামরাইয়ে কুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও প্যানেল চেয়ারম্যান, চেয়ারম্যানের দুই ছেলে জোর পূর্বক রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে চেয়ারম্যানের বাড়ির ভিতর গেট আটকে দিয়ে মারধর করার ঘটনা ঘটেছে।ভুক্তভোগী হাসেম উপজেলার কুল্লা ইউনিয়নের খাতরা এলাকার মৃত গোলাম আলীর ছেলে।
৯৯৯ এ ফোন দিয়ে ভুক্তভোগী হাসেমকে পরিবারের লোকজন উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করেন। মারধরের ঘটনায় ভুক্তভোগী হাসেম এখন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে উপজেলার কুল্লা ইউনিয়নের খাতরা গ্রামে চেয়ারম্যান লুৎফর রহমানের বাড়িতে।পরিবার সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী হাসেমের সাথে চেয়ারম্যান লুৎফর রহমানের জমি নিয়ে দীর্ঘদিনের শত্রুতা রয়েছে। হাসেম নতুন বাড়ি করতে গেলে চেয়ারম্যান ও তার লোকজন জোর পূর্বক বাড়ী তৈরির কাজ বন্ধ রাখেন এবং তাকে বাড়ি ছেড়ে দিতে বলেন। সেখানে চেয়ারম্যানের নিজের বাবার নামে মার্কেট তৈরি করবে বলে জানান তাদেরকে।
অসহায় হাসেম চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলে হাসেম ও তার পরিবারকে মেরে ফেলার হুমকি দেন বলে জানান ভুক্তভোগীর পরিবার। এলাকায় চেয়ারম্যানের নামে ব্যাপক ভীতি রয়েছে এবং তার রয়েছে একটি নিজস্ব বাহিনী। জমি সংক্রান্ত পূর্ব শত্রুতার জেরে গত মঙ্গলবার (৫ মার্চ) রাত ১০ টার দিকে বাড়ি ফেরার পথে হাসেমকে জোরপূর্বক রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে যায় চেয়ারম্যান লুৎফর রহমানের দুই ছেলে রিপন ও মুমিন,প্যানেল চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন, স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হক, জাহিদ ও খাতরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শামীম। হাসেমকে চেয়ারম্যানের বাড়িতে নিয়ে হাত-পা মুখ বেধে তারউপর অমানুষিক নির্যাতন চালা তে থাকে চেয়ারম্যানের দুই ছেলে রিপন ও মুমিন, প্যানেল চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিনসহ দলের সবাই জোরপূর্বক তার বাড়ি ছেড়ে দিতে বলে। সেখানে চেয়ারম্যানের বাবার নামে মার্কেট করবে। দেশীয় অস্ত্র দিয়ে পিটিয়ে হাসেমের বাম পা ও বাম হাত ভেঙে গুড়ো করে দেয়। এছাড়াও তার কোমড়, মুখ, ডান পা পিটিয়ে ক্ষত বিক্ষত করে বলে জানান ভুক্তভোগী হাসেমের স্ত্রী।
৯৯৯ এ ফোন দিলে ঘটনাস্থলে পুলিশ যায়।পুলিশের সামনেই হাসেমকে মারতে থাকে চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান,প্যানেল চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন,চেয়ার ম্যানের ছেলে রিপন ও মুমিন এবং স্কুল শিক্ষক শামীম। ঘটনাস্থলে ভুক্তভোগী হাসেমের স্ত্রী ও ভাইয়েরা গেলে তাদেরও মারধর করে চেয়ারম্যান বাহিনী। পুলিশের সামনে জোর পূর্বক সাদা কাগজে স্বাক্ষর করান চেয়ারম্যানের লোকজন। কিন্তু ভুক্তভোগী হাসেমের ভাই জাহের আলী বলেন, আমার ভাই তো মরে গেলেও আমি স্বাক্ষর দিবো না।পুলিশ কিছুই না বলে নিরব ভূমিকা পালন করেন ।চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান ও প্যানেল চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিনের বাহিনীর কাছে কুল্লা ইউনিয়নের লোকেরা জিম্মি। ভুক্তভোগী হাসেমের স্ত্রী হোসনে আরা কান্নাকরে বলেন লুৎফর চেয়ারম্যান আমাদের বাড়ি দখল করার চেষ্টা করছে দির্ঘদিন ধরে আমার স্বামী চেয়ারম্যানের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আমার স্বামী ও আমাদের পরিবারকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আসতেছে। গত মঙ্গলবার রাতে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে চেয়ারম্যানের নিজের বাড়িতে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন চালায়।
আমরা খবর পেয়ে চেয়ারম্যানের বাড়িতে গেলে আমাদের গেটের বাইরে বের করে দেয়। আমার স্বামীর হাত – পা বাধা দেখি। তার মুখের উপর পা দিয়ে ধরে রেখেছে চেয়ারম্যান। আর তার দুই ছেলে রিপন ও মুমিন, বোরহান মেম্বার, শামীম মাষ্টার, আব্দুল হক, জাহিদ তাকে মারছে। আমার ৫ বছরের ছেলে কান্না করায় তাকে একটি চড় মারে। আমি লুৎফর চেয়ারম্যানের পা ধরে মাপ চাইলে তিনি আমাকে লাথি মেরে ফেলে দেয় এবং গেটের বাইরে বেরকরে দেয়।পরবর্তীতে জোর পূর্বক সাদা কাগজে সই নেয় এবং মামলা করলে আমার পরিবারের সবাইকে মেরেফেলারও হুমকি দেয়।
ভুক্তভোগী হাসেমের ১২ বছরের মেয়ে সামিয়া বলেন, আমার বাবাকে পাইপ দিয়ে মারছে। আমি কান্না করায় আমাকে মারছে বলে কান্নায় ভেঙে পড়ে।হাসেমের ভাই মো: জাহের আলী আব্দুল আলিম বলেন, আমরা পুলিশের সাথে চেয়ারম্যানের বাড়ির ভিতর প্রবেশ করি। গিয়ে দেখি আমার ভাই মনে হয় মরে পড়ে আছে তখন চেয়ারম্যান সবার সামনে জোরপূর্বক সাদা কাগজে স্বাক্ষর করান,কিন্তু আমি স্বাক্ষর না করায় আমাকে মারদর করে। পরে জোর করে আমার স্বাক্ষর নেয় চেয়ারম্যানের লোকজন। আমরা কোন রকমে ভাইকে নিয়ে ইসলামপুর সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে আমাদের উন্নত চিকিৎসারজন্য রেফার্ড করে দ্বায়িত্বরত চিকিৎসক,পরে ভাইকে সাভার সুপার ক্লিনিকে ভর্তি করে ৩দিন চিকিৎসা করাই। খরচ কুলাতে না পেরে ভাইকে শুক্রবার (৮ মার্চ) দুপুরে আবার ইসলামপুর সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করি। এখন সেখানেই চিকিৎসারত অবস্থায় রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, লুৎফর রহমান চেয়ারম্যান হওয়ার আগেও এলাকায় একক আধিপত্য বিস্তার করত।তার একাধিক ইট ভাটা রয়েছে।জোর পূর্বক তিন ফসলী জমির মাটি কেটে নিতো।মাইরের ভয়ে কেউ কিছুই বলতে সাহস পায়না। হাসেমের উপর নির্যাতনে এলাকায় এখন থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সবাই মনে করছিল হাসেম মারা গেছে। এ বিষয়ে উপজেলার কুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিনকে ফোন দিলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন আমি ঘটনার পরে গিয়েছি। কুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান নির্যাতনের বিষয়টি অন্য দিকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি হাসেমকে নির্যাতনের বিষয়টিকে চুরি করেছে বলে, ভুক্তভোগী হাসেমকে হাত পা বেঁধে নির্যাতন করা হয় বলে উক্ত বিষয় থেকে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করেন।
ধামরাই থানার উপ- পরিদর্শক ( এস আই) অসীম বিশ্বাস বলেন, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি হাসেমকে মারধর করছে,তখন বললাম আপনারা তো মারতে পারেন না। ভুক্তভোগী যদি অপ রাধ করে থাকে তার বিরুদ্ধে মামলাদেন। কিন্তু পরে ভুক্তভোগীর পরিবার তাকে নিজেদের জিম্মায় নিয়ে যান। বিষয়টি স্থানীয় ভাবে সমাধানের কথা বলা হয়।