সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি : গ্রীষ্মকালীন অবকাশ ও ঈদ উল আযাহা উপলক্ষ্যে ২২ দিনের ছুটি চলমান রয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি)। এর মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই শতাধিক গাছ কেটে কলা ও মানবিকী অনুষদের স¤প্রসারিত ভবন ও চারুকলা অনুষদের ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করা হয়েছে।
এদিকে গাছ কেটে ভবন নির্মাণের প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক মানববন্ধন, মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে সাতটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের পেছনে কলা ও মানবিকী অনুষদ সম্প্রসারিত ভবন এবং আল-বেরুনী হলের সম্প্রসারিত ভবনের সামনে চারুকলা অনুষদের ভবন নির্মাণের জন্য গাছ কাটা হয়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, এস্কেভেটর দিয়ে গাছগুলো উপড়ে ফেলা হয়েছে। এরপর কয়েকজন মানুষ সেগুলো কেটে কেটে অনত্র সরিয়ে ফেলছেন। দুই ভবন নির্মাণের জন্য প্রায় দুই শতাধিক গাছ কাটা পড়েছে। এছাড়া আরো প্রায় শতাধিক ছোট বড় গাছ কাটা পড়বে। এদিকে গাছ কাটার পর সেখানে আশ্রয় নেওয়া পাখিদের ছোটাছুটি চোখে পড়েছে। অন্যদিকে গাছ কাটার সময় স্ব স্ব অনুষদের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে গাছ কাটার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রতিবাদ জানান ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের একাংশের নেতাকর্মী ও প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা। পরে তারা সেখানেই নির্বিচারে গাছ কেটে ভবন নির্মাণের প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।
মানববন্ধনে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি আলিফ মাহমুদ বলেন, ‘ছুটি হলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের গাছ কাটার সংস্কৃতি বহু পুরোনো। এবারেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। শিক্ষার্থীরা হলে নেই এই সুযোগে গাছ কাটার উৎসবে মেতেছে প্রশাসন। আজকে গাছ কাটার সময় চারুকলা বিভাগ নিজেদের শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে। ভবন নির্মাণে আমাদের আপত্তি নেই, আমাদের একটাই দাবি মাস্টারপ্ল্যানের মাধ্যমে ভবন নির্মাণ করা হোক।’
অন্যদিকে অবিলম্বে মাস্টারপ্ল্যানের টেন্ডারের দরপত্র আহ্বান করাসহ তিন দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের আরেক অংশ।
রবিবার (০২ জুন) দুপুর দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে ভিসির বাসভবনের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন তারা।
তাদের অন্য দাবিগুলো হলো- একাডেমিক ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন কমিটির অনুমোদন নিশ্চিত করা এবং একাডেমিক ভবন ব্যতীত আর একটি স্থাপনাও মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করার আগে নির্মাণ না করা।
এছাড়া ছুটির মধ্যে নির্বিচারে গাছ কেটে ভবন নির্মাণের প্রতিবাদ জানিয়েছেন শিক্ষকরাও। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর খো. লুৎফল এলাহী বলেন, ‘এভাবে ছুটির মধ্যে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির সুযোগে ভবন নির্মাণ করা অত্যন্ত দৃষ্টিকটু। কলা ও মানবিক অনুষদে আমাদের চাওয়া ছিল ভবনটি বর্তমান ভবন সংলগ্ন স্থানে করার। এতে ভবন কিছুটা ছোট হলেও পরিবেশ ও প্রাণ প্রকৃতির তেমন ক্ষতি হতো না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর সোহেল আহমেদ বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-প্রকৃতি, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য অনন্য বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্য। তবে যখন সেটা ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপন্ন হয়, তেমন কাজ কখনোই সমর্থন যোগ্য নয়। শিক্ষা ও গবেষণার জন্য অবশ্যই ভবনের প্রয়োজন আছে। কিন্তু সেটা প্রাণ-প্রকৃতি ও সৌন্দর্যকে ধ্বংস করে নয়।’
সার্বিক বিষয়ে চারুকলা অনুষদ ভবনের প্রকল্প পরিচালক ও চারুকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এম এম ময়েজ উদ্দিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের নির্ধারিত জায়গাতেই ভবন নির্মাণ করছি। পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো কিছুই আমরা করছি না। এছাড়া যে গাছগুলো কাটা হয়েছে সেই গাছগুলো আমরা নিজেরাই রোপণ করে পরিচর্যা করবো। সকল অংশীজনদের সুপারিশকে গ্রহণ করে এবং তাদের নিয়ে আমরা একটা টিম তৈরি করবো, যাতে তারা আমাদের অগ্রগতিতে লক্ষ্য রাখতে পারেন।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর মো. নূরুল আলম এবং কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন প্রফেসর মোজাম্মেল হককে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।