
জাহিদুল ইসলাম, কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধিঃ প্রকৃতির রুদ্রমূর্তি আর আমলাতান্ত্রিক গাফিলতির শিকার খুলনা-কয়রার মাটিয়াভাঙ্গার মানুষ। যে কপোতাক্ষ নদকে ঘিরে এখানকার জীবন, সেই নদই এখন সর্বনাশী রূপ নিয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের কপোতাক্ষ নদের পাউবোর বেড়িবাঁধে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙ্গন।

পুনর্বাসন প্রকল্পের কাজ চলার সময়ই ২০০ মিটার বাঁধ ঝুপঝাপ শব্দে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় আতঙ্কে রাতভর বিনিদ্র প্রহর গুনেছেন নদীপাড়ের মানুষ। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এক মাস আগেই বাঁধটিতে ফাটল দেখা দিয়েছিল। বারবার পাউবোকে জানানো সত্ত্বেও তারা কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। শুধুমাত্র ‘দায়সারা’ কিছু বস্তা ফেলে কাজ শেষ করা হয়েছিল। আর তারই ফল মিলল বৃহস্পতিবার রাতে। মাটিয়াভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা নয়ন খাঁ ক্ষোভের সাথে জানান, “বড় বড় মাটির খণ্ড যখন শব্দ করে নদীতে ভেঙে পড়ছিল, তখন মনে হচ্ছিল আমাদের ভিটেমাটি বুঝি আর রক্ষা হবে না। আমরা রাতেই দ্রুত রিং বাঁধ নির্মাণ করে এলাকাকে কোনোমতে বাঁচিয়েছি। কিন্তু ১২০০ কোটি টাকার প্রকল্প চলছে, অথচ আমাদের এভাবে মরতে হচ্ছে কেন?” ইউপি সদস্য মোঃ দিদারুল আলম বলেন, “যখন জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ছিল, তখন নেওয়া হয়নি। এখন সাময়িক রিং বাঁধ দিয়েছি। কিন্তু জোয়ারের পানি যে হারে বাড়ছে, তাতে দ্রুত ব্লক ডাম্পিং না হলে এই রিং বাঁধ টিকবে না। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই লোনা পানি ঢুকে সব ভাসিয়ে দেবে।”
”১২০০ কোটি টাকার প্রকল্পের ‘দুর্বলতা’ কয়রা উপজেলার উত্তর ও দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রায় ১,২০০ কোটি টাকার একটি বিশাল পুনর্বাসন প্রকল্পের কাজ চলমান। কিন্তু সেই কাজের গতি এবং মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মাটিয়াভাঙ্গার ভাঙ্গনস্থলটিও এই প্রকল্পের অংশ।
পাউবোর সাতক্ষীরা-২ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মোঃ আলমগীর কবীর জানান, কাজ চলমান অবস্থাতেই বাঁধটি ভেঙে গেছে এবং এতে কংক্রিট ব্লক নির্মাণের সরঞ্জামও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রাশিদুল ইসলাম প্রকল্পের বিলম্বের জন্য জমি অধিগ্রহণ জটিলতা, বরাদ্দ পেতে দেরি হওয়া এবং বালু-মাটির সংকটকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, “মাটিয়াভাঙ্গা এলাকার বাঁধে জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু হয়েছে।
সংকিত হওয়ার কিছু নেই।”” বর্ষার আগে কাজ না হলে মহাবিপদ” কিন্তু প্রকৌশলীর আশ্বাসে ভরসা রাখতে পারছেন না সাধারণ মানুষ। মাটিয়াভাঙ্গা গ্রামের প্রবীণ কৃষক অজিয়ার শেখ প্রশ্ন তোলেন, “যদি কাজ ঠিকমতো শেষ না হয়, তাহলে আগামী বর্ষায় আমাদের কী হবে? নদীশাসন আর চর বনায়নের কথা বলা হচ্ছে, অথচ চোখের সামনে বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। সরকার কি আমাদের ডুবে মরার জন্য ছেড়ে দেবে?” স্থানীয়দের দাবি একটাই—প্রকল্পের অজুহাত নয়, বাঁধের কাজ যেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে, গুণগত মান বজায় রেখে শেষ করা হয়। না হলে সুন্দরবন উপকূলের এই জনপদ আর কোনোদিন মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না।