সাম্পতিক সময়ের এক ভয়াবহ সমস্যা হলো কিশোর অপরাধ। দ্রুত নগরায়ন ও শিল্পায়নের ফল হলো। কিশোর অপরাধ। শিল্পায়ন ও নগরায়ন প্রক্রিয়ার প্রভাবে। পারিবারিক কাঠামোর ধরন দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। যা কিশোর অপরাধ বৃদ্ধির সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করছে। প্রধানত বয়সকে কেন্দ্র করে অপরাধী ও কিশোর অপরাধীর পার্থক্য নির্ণয় করা হয়।
বাংলাদেশের দণ্ডবিধি অনুযায়ী ৭-১৬ বছরের অপরাধপ্রবণ ও কিশোর-কিশোরীদের কিশোর অপরাধের শ্রেণিভুক্ত অপরাধপ্রবণ অপরাধীদের অপরিণত বয়স, দুর্বল মানসিকতা, দায়িত্ববোধের অভাব প্রভৃতির পরিপ্রেক্ষিতে কিশোর অপরাধীদের বং বাধের ব্যবহারকে স্বতন্ত্র দৃষ্টিকোণ হতে বিবেচনা করা হয়।
বাংলাদেশে সম্প্রতি শিশুদের অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা ক্রমশ:ই বাড়ছে বলে জানাচ্ছে দেশটির আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী।
পুলিশের কাছে এই তথ্য রয়েছে যে, মহানগরগুলোতে চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, ছিনতাই থেকে শুরু করে হত্যাকান্ডের মত ঘটনায় শিশুরা ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিসার ক্যাপ্টেন আবির হাসান জানিয়েছেন এ সংখ্যা ক্রমশ:ই বাড়ছে।
যদিও অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়া শিশুদের সংখ্যা ঠিক কত এবং এখন পর্যন্ত ঠিক কোন ধরনের শিশুরা এ ধরনের কাজে ব্যবহার হচ্ছে এবং কি অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তার কোন সুনির্দিষ্ট এবং বিস্তারিত বিবরণ নেই আইন-শৃংখলা রক্ষাকারীদের হাতে ।
তবে সরকারের সমাজসেবা অধিদপ্তর কিংবা জাতিসংঘ শিশু তহবিল বলছে প্রধাণত যেসব শিশুরা পরিবার থেকে বেরিয়ে রাস্তায় চলে আসছে তারাই পড়ছে অপরাধী চক্রের খপ্পরে।
জাতিসংঘ শিশু তহবিলের কর্মকর্তা শাবনাজ জেহরিন বলছেন তারা দেখতে পাচ্ছেন মূলত: যেসব পরিবারে শিশুদের সৎ মা বা সৎ বাবা রয়েছে এবং দারিদ্র প্রকট তারাই বেরিয়ে আসছে রাস্তায়। প্রতিষ্ঠানটি আরো বলছে, সম্প্রতি সিডর ও আইলার কারণেও অনেক শিশু ঘরছাড়া হয়েছে।
বিভিন্ন পক্ষের সাথে কথা বলে জানা গেছে আসলে শিশুরা খাবার জোটাতে গিয়েই জড়াচ্ছে অপরাধে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বস্ত্র বা বাসস্থানের অধিকারের কথা আইনে আছে বাস্তবে কার্যকারিতা নেই বললেই চলে।
কারওয়ানবাজারের কয়েকজন শিশু যারা চুরি-ডাকাতির সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছে তারা বলছে, রাজধানীতে এসে প্রথমেই তারা ভীষণ খাবারের কষ্টে পড়ে এবং এর ফলশ্রুতিতেই তারা অপরাধ জগতের সাথে জড়িয়ে পড়ে।
এই শিশুদের পুনর্বাসনের সুযোগ সম্পর্কে খোঁজ নিতে গিয়ে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা সুরভীর শরণাপন্ন হই। এই স্কুলের ১০-১৫ ভাগ শিশু পথশিশু এবং এদের অনেকেই যৌনকর্মী হিসেবে ব্যবহার হয়।
তিনি জানিয়েছেন যদি বা স্বল্প সংখ্যায় শিশুদের ঘন্টা তিনেকের জন্য স্কুলে আনা সম্ভব হচ্ছে, তারপর আর পর্যবেক্ষণের কোন সুযোগ থাকছে না, স্কুল কম্পাউন্ডের বাইরেই শিশুরা আবারও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
অপরাজেয় বাংলাদেশ নামের একটি বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা যেটি পথশিশুদের নিয়েই কাজ করছে, সেই সংগঠনের তেজগাঁ শাখার তত্ত্বাবধায়ক সেলিনা আক্তার শেলী বলছিলেন আশ্রয়কেন্দ্র থেকে শিশুদের বের করে নেবার জন্য সবসময় তৎপর থাকে অপরাধীরা।
সে কারণেই শিশুদের সচেতন করার কাজ করছে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো। ।আশ্রয়কেন্দ্রের শিশুরা জানিয়েছে তারা পাচার ও যৌন নির্যাতন সম্পর্কে শিখছে, পাশাপাশি হাতের কাজ শেখার চেষ্টা করছে।
সরকারী উদ্যোগ সম্পর্কে খোঁজ নিই। প্রথমত: অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়া শিশুরা জানিয়েছে পুলিশের হাতে ধরা পড়লে তাদের মারপিট দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। কখনও নেওযা হয় ভবঘুরে কেন্দ্রে।
এই কেন্দ্রতেও শিশুরা নির্যাতিত হয়। শিশু ফাতেমা ভবঘুরে কেন্দ্রে বেশ কিছুদিন কাটিয়ে ফিরেছে, রাজধানীর হাইকোর্ট মাজার সংলগ্ন এলাকায় একদল মাদকসেবী ও যৌনকর্মীদের সঙ্গে বসেছিল সে।
কোন কোন শিশুকে অপরাধ প্রমাণিত হলে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে নেওয়া হয়। আইনগত বাধা থাকায় উন্নয়ন কেন্দ্রে শিশুদের সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
তবে, সংশোধন কেন্দ্রের পরিবেশ অনেকটাই ভালো বলে মন্তব্য করেছে এখান থেকে বেরিয়ে আসা একজন মেয়ে শিশু। সমস্যা হয় তাদেরই যাদের জেলে থাকতে হচ্ছে। যদিও শিশুদের দাগী অপরাধীদের সাথে থাকার কথা নয়।
পুলিশ সংস্কার প্রোগ্রামের ভিকটিম সাপোর্ট স্পেশালিস্ট মুমিনুন্নিসা শিখা, শিশুদের এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলছিলেন বিক্ষিপ্তভাবে আইনগত ব্যবস্থা, খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষার ব্যবস্থা করে এই সমস্যার সমাধান হবে না, দারিদ্র দূর করতে হবে।
সমাজসেবা অধিদফতর এখন এ দিকেই বেশি নজর দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন মহাপরিচালক সীতাংশু সেন বলছেন। কিন্তু পুনর্বাসনের সুযোগ পাচ্ছে খুবই কম সংখ্যক শিশুরা।
সরকার ধারণা করছে এই শিশুদের সংখ্যা সাত থেকে সাড়ে সাত লক্ষের মত, কিন্তু সরকারের আশ্রয় কেন্দ্রে সুযোগ রয়েছে সবমিলিয়ে হাজার দুয়েকের মত। তাহলে উপায় কি?
সরকার এখন চাইছে শিশুদের অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়া থেকে বিরত রাখতে। যেহেতু আসনসংখ্যা কম আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে, তাই পরিবারে ফিরিয়ে দিতে, পারিবারিক পরিবেশে শিশু অদিকার নিশ্চিত করতে।