আনোয়ার হোসেন, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
বেনাপোল স্হল বন্দরে আমদানিকারকরা বলছেন,এর আগে বেনপোল স্হল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ ট্রাক কাঁচা মাল পচনশীল পণ্য আমদানি হত। কিন্তু বর্তমানে আমদানির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫ থেকে ১০ ট্রাকে রাজস্বআদায়ও কমে হচ্ছ।
আন্তর্জাতিক আইনে বন্দরে ‘পচনশীল পণ্য সবার আগে প্রবেশ ও খালাসের নির্দেশনা’ থাকলেও বেনাপোলের বিপরীত ভারতের পেট্রাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ মানছে না। এতে করেবাংলাদেশের আমদানিকারকরা ক্ষতির মুখে পড়ায় বেনাপোল স্হল বন্দর দিয়ে কাঁচা ফল পচনশীল পণ্য আমদানি’ বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশ এর আমদানিকারকদের স্বার্থ বিবেচনা করে এরইমধ্যে পেট্রাপোল বন্দর ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানিয়েছে, বেনাপোল স্হল বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে তার সুফল এখনও দৃশ্যমান হয়নি। ফলে অধিকাংশ পচনশীল পণ্যের চালান দিনের পর দিন প্রবেশ করতে না পেরে ভারতের ওপারেই নষ্ট হচ্ছে। কোনো কোনো চালান সিরিয়াল পেয়ে রাতে প্রবেশের অনুমতি পেলেও তাতে লাভ হচ্ছে না বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলছিলেন,গত এক মাস ধরে ভারতের পেট্রাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ সিরিয়ালের নামে পচনশীল পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে দুপুরের পর ২০ ট্রাক জেনারেল পণ্যের পর মাত্র ৫ ট্রাক পচনশীল পণ্য রপ্তানি নিয়ম চালু করেছে।
সাজেদুর বলেন, বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ রাতে কোনো পচনশীল পণ্য খালাস করতে দেওয়া হয় না। তাই পরেরদিন সকালের পরে বেনাপোল বন্দরে খালাসের ব্যবস্থা করতে হয়। এতে অধিকাংশ পণ্য পচতে শুরু করে। বেনাপোল কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোওয়াডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক লতা বলেন, বেনাপোল এই বন্দর দিয়ে ভারত থেকে বিভিন্ন ধরনের ফল, মাছ, সবজি, ক্যাপসিকাম, পেঁয়াজ ও কাঁচামরিচ সহ অন্যান্য পচনশীল পণ্য আমদানি করা হয়।
এসব পণ্য সবার আগে প্রবেশ ও খালাসের নির্দেশনাও রয়েছে। বিগত দিনে এটাই চালু ছিল বলে জানান। ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে নতুন ম্যানেজার কমলেশ সাইনি যোগ দেওয়ার পর থেকে তিনি সিরিয়াল ও আন্তর্জাতিক রুল ভঙ্গ করে পচনশীল পণ্যের সঙ্গে সাধারণ পণ্য এক করে বেনাপোল স্হল বন্দরে পাঠাচ্ছেন বলে তারা অভিযোগ করেন।
এ অবস্থায় বেনাপোল স্হল বন্দরের ব্যবসা বান্ধব পরিবেশ হুমকির সম্মুখীন হয়েছে দ্রুত দুই দেশের কাস্টমস ও বন্দর কর্তৃপক্ষ বসে বিষয়টি সুরাহার আহ্বান জানান এমদাদুল হক লতা। বেনাপোল আমদানিকারক রাহাত ট্রেডার্সের মালিক জিয়াউর রহমান বলেন, পেট্রাপোল স্থল বন্দরের নতুন ম্যানেজার কমলেশ সাইনি আসার পর এই হয়রানি বেড়ে গেছে।
তার ভাষ্য মতে সারাদিন বিভিন্ন পণ্যের ট্রাক বেনাপোল বন্দরে রপ্তানি করলেও কাঁচামাল ও পচনশীল পণ্যের ট্রাক পাঠানো হচ্ছে সন্ধ্যার পরে। কিন্তু কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সন্ধ্যার পর এসব মালের শুল্কায়ন ও খালাস করেন না।
এতেকরে আমদানিকারকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে তিনি আরও বলেন। যাহার ফলে আমরা কাঁচা মালামাল দিনের দিনে ডেলিভারি নিতে পারছি না। পরের দিন এসব মাল খালাস নিতে গেলে দেখা যায়, শতকরা ১০ ভাগ মাল পচে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে আমরা মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছি। বাধ্য হয়ে এসব মালামাল অন্যান্য বন্দরে চলে যাচ্ছে বলে জানান এই আমদানিকারক।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, চলতি বছরের ৩০ মার্চ ভারতীয় পেট্রাপোল কাস্টমসের সহকারী কমিশনার অনিল কুমার সিংহ স্বাক্ষরিত এক পত্র জারি করে, যেখানে পেট্রাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষের ম্যানেজারকে পচনশীল পণ্য দ্রুত রপ্তানির বিষয়টিতে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিতে বলা হয়।
কারণ আর্টিকেল নম্বর ৭.৯ ডাব্লুউটিও ট্রেড ফেসিলিটেশন এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী এ আদেশ দ্রুত কার্যকর করতে হবে। কিন্তু ওই আদেশও মানছে না ভারতের পেট্রাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ।
কেনো এমনটি হচ্ছে জানতে চাইলে আমদানিকারক শহীদ বলেন, ভারতের ওপারের রপ্তানিকার রা আমাদেরকে জানিয়েছেন, ওপারের ক্লিয়ারিং এজেন্টরা দ্রুত মাল পাঠানোর জন্য কিছু বকশিস দিতে হতো। হঠাৎ করে সেটা বন্ধ করে দেওয়ায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে এ কাজ করছেন। তবে এই অভিযোগ যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
বেনাপোল শুল্ক ভবন যুগ্ম কমিশনার মোঃ শাফায়েত হোসেন বলেন বেশ কিছুদিন ধরে বেনাপোলের ওপারে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে বাংলাদেশে রপ্তানিকৃত ট্রাকের সিরিয়ালের নামে এক ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে বলে খবর পেয়েছি।
পচনশীল পণ্যসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানিতে বিলম্ব হচ্ছে। এর ফলে বেনাপোল স্হল বন্দরে আগের তুলনায় আমদানি কমহয়ে গেছে। আমদানিকারকরা তাদের সুবিধার্থে অন্য বন্দরের দিকে চলে যাচ্ছে। ফলে বেনাপোল শুল্ক ভবনে রাজস্ব আদায়ও কমেছে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক মোঃ রেজাউল করিম বলেন, বিষয় টি সমাধানের জন্য ইতি মধ্যে পেট্রাপোল বন্দর ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলেছি ব্যবসায়ীদেরসমস্যার কথা জানিয়েছি।
অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে পচনশীল পণ্যের ট্রাক সারাদিন ব্যাপী বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করে, সে অনুযায়ী সিরিয়াল মেইনটেইন করার জন্য তাকে আমি অনুরোধ করেছি।