অরবিন্দ রায়, স্টাফ রিপোর্টারঃ
আজ সোমবার ২৬ আগষ্ট শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মাষ্টমী। ভাদ্র মাসের কৃষ্ণ অষ্টমী তিথিতে মথুরায় কংসের কারাগারে শ্রীকৃষ্ণ জন্ম নিয়েছিলেন। সেই জন্মতিথি স্মরণে সনাতনা ধর্মাবলম্বীরা শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী পালন করে থাকেন। শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সারা দেশে ও জাতির মঙ্গল কামনায় মন্দিরে মন্দিরে গীতা পাঠ ও বিকেলে ঐতিহাসিক জন্মাষ্টমীর মিছিল ও রাতে শ্রীকৃষ্ণ পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
অষ্টমী তিথি (২৬ শে আগস্ট) ৯ ভাদ্র ১৪৩১ বাংলা সোমবার রাত্রি ৯টা ৫২ মিনিট ৩৮ সেকেন্ডে শুরু পরদিন মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা ১৭ মিনিট ৪৪ সেকেন্ট পর্যন্ত শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী পালন করা যাবে।
সনাতন ধর্ম অনুযায়ী, পৃথিবীতে যখনই অধর্ম বেড়ে গিয়ে ধার্মিক ও সাধারন মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের মাধ্যমে ধর্মের রক্ষার জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অবতার রুপে পৃথিবীতে নেমে আসে।
জানা যায়, দ্বাপর যুগে অত্যাচারী রাজা কংসের নৃশংসতায় মথুরাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। কংসের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তারা ঈশ্বরের নিকট প্রার্থনা শুরু করে। ভক্তের ডাকে সাড়া দেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।
রাজা কংস একদিন তার ছোট বোনকে দেবকী ও তার স্বামী বাসুদেব কে নিয়ে রথে চড়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ এমন সময় দৈববাণী হলো, ” বোন দেবকীর অষ্টম সন্তানই হবে তার মৃত্যুর কারন। “
রাজা কংস দৈববাণী শুনে সাথে সাথে তার বোনকে হত্যা করতে উদ্যত হলেন। বাসুদেব নিভৃত করলেন। বাসুদেব বললেন আমাদের দুজনকে কারাগারে আটকে রাখুন। আমাদের সন্তান হলে আপনার হাতে তুলে দিব। আপনি আমাদের সন্তানকে হত্যা করে নিজের সংশয় কাটাবেন ।
বাসুদেবের যুক্তি রাজা কংসের ভালো লাগলো। কংস তাদের কারাবন্দি করে রাখলেন। কারাগারে থাকার সময় দেবকি ও বাসুদেবের একে একে ছয়টি সন্তান কংসের হাতে তুলে দেন। সপ্তম সন্তান হাতে নেবার পরই সে হাসতে হাসতে শূন্যে ভেসে যায়। কংসকে তার মৃত্যু অবধারিত বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে শূন্যে ভেসে যেতে থাকে।
দেবকির অষ্টম সন্তানের জন্ম নেয় ভ্রাদ্র মাসের শুক্লা পক্ষের অষ্টমী তিথির রাতে। সেই রাত ছিল প্রচন্ড ঝড় -বৃষ্টি। বৈরী আবহাওয়ার কারনে কারাগারের ফটকে কোন রক্ষী পাহারায় ছিল না।
এমন সময় এক দৈববাণীতে সদ্যোজাত ছেলে সন্তানকে নিরাপদে গোকুলে নন্দ – যশোদা দম্পতির কাছে রেখে আসতে বলা হয়। এ সময় কারাগারের দরজাও খুলে যায়। বাসুদেব ঝড় – বৃষ্টির উপেক্ষা করে ছেলেকে নিয়ে গোকুলে যায়। গোকুলে যশোদার পাশে ছেলেকে রেখে যশোদার মেয়ে সন্তানকে নিয়ে আবার কারাগারে ফিরে আসেন।
গোকুলেই যশোদার কাছে বড় হতে থাকেন শ্রীকৃষ্ণ। শ্রীকৃষ্ণ যুদ্ধে মথুরারাজ কংসকে পরাজিত ও হত্যা করে। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, পাশবিক শক্তি যখন সত্য, সুন্দর ও পবিত্রতাকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়। ধর্ম সংস্হাপনের জন্য ভক্তের প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে ঈশ্বর অবতার রুপে পৃথিবীতে আসেন। পৃথিবীতে যখনই পাপাচার শুরু হয় তখনই শ্রীকৃষ্ণ দুষ্কৃতকারীদের বিনাশ, সাধুর রক্ষা, ধর্ম সংস্হাপনের অবতার রুপে পৃথিবীতে আসেন।
জন্মাষ্টমীর আনুষ্ঠানিকতা কমিয়ে সাশ্রয়কৃত অর্থ বন্যার্তদের সহায়তার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পূজা উদযাপন পরিষদ। শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উপলক্ষে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ ( ইসকন) সহ বিভিন্ন সামাজিক – সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠন শ্রীকৃষ্ণে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন।