অর্চক সিকদার, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি :
দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধ, দোষী ব্যক্তিদের বিচারসহ আট দফা দাবিতে চট্টগ্রামে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। বৈরী আবহাওয়া ও বৃষ্টি উপেক্ষা করে এতে অংশ নেয় হাজার হাজার সনাতন ধর্মাবলম্বী। এ সময় অধিকার আদায়ের বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা গেছে তাদের। প্রায় দুই ঘণ্টায় মূল সড়কে অবস্থান নেওয়ার কারণে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট।
গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রাম নগরের জামালখান এলাকায় ‘সম্মিলিত সনাতনী নাগরিক সমাজের’ আয়োজনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এই পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি ঘিরে দুপুরের আগ থেকেই জামালখান এলাকায় আসতে শুরু করে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। বিভিন্ন বাস ও যানবাহনে করে দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই যোগ দেন এই সমাবেশে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে একের পর এক মিছিল নিয়ে নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে যোগ দেন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ।
দুপুরের পরে ভিড় বাড়তে থাকলে জামালখান ও এর আশপাশে যানজট সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে নগরের গণি বেকারি এলাকা থেকে জামালখান হয়ে কাজীর দেউড়িমুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সমাবেশস্থলে বিপুল পরিমাণ পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি দেখা গেছে।
সমাবেশ চলাকালে ধর্মীয় সংঘাত এড়াতে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান বক্তারা। এ সময় অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নানা সচেতনতা অবলম্বনের পরামর্শও দেওয়া হয়। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বন্ধু নির্বাচনে সতর্কতার কথা তুলে ধরেন বক্তারা। দেশব্যাপী হিন্দুদের ওপর নির্যাতন, ঘর-বাড়ি ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর, মঠ-মন্দিরে আক্রমণ এবং উৎসবে বিচারবহির্ভূত হামলার প্রতিবাদে নানা বক্তব্য দেন সংশ্লিষ্টরা।
সমাবেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে পুণ্ডরিক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী বলেন, আমরা সনাতনী, আমরা হিন্দু—এই হবে আমাদের পরিচয়। আমরা আর্য পুত্র, আমরা ঋষি সন্তান এই হবে আমার পরিচয়। দয়া করে সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। অনলাইনে কেউ কোনো উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডে পা দেবেন না। আর অপরিচিত কোনো ব্যক্তিকে অনলাইনে বন্ধু বানাবেন না। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের সহযোগিতা করুন।
এদিকে সমাবেশে আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন। এর মধ্যে রয়েছে ‘কথায় কথায় বাংলা ছাড়, বাংলা কী তোর বাপ-দাদার’, ‘আমার মাটি আমার মা, বাংলাদেশ ছাড়ব না’, ‘তোমার দেশ আমার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ’, ‘বিশ্বের হিন্দু এক হও এক হও’, ‘আমার মন্দির ভাঙল কেন, জবাব চাই জবাব চাই’, ‘আমি কে তুমি কে, বাঙালি বাঙালি’ প্রভৃতি।
সমাবেশ চলাকালে হিন্দু জাগরণ মঞ্চ, জাতীয় হিন্দু ফোরাম, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটসহ কয়েকটি সংগঠনের নেতাকর্মীদের সড়কে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। বিক্ষোভকারীদের বিভিন্ন ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরে বিভিন্ন দাবি জানাতে শোনা যায়। সমাবেশে অংশ নেওয়া রাজেশ দাশ বলেন, স্বাধীন দেশে আমরা কোনো ধরনের সংঘাত, অস্থিরতা চাই না। কিন্তু খুব দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, আমাদের মন্দিরে হামলা হচ্ছে। গত গণেশ পূজায় চেরাগী পাহাড় এলাকায় মূর্তি আনার পথে পানি ঢেলে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। ষড়যন্ত্রকারীরা চাচ্ছে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে। আজ আমরা এখানে এসেছি প্রতিবাদ জানাতে।
তাদের অভিযোগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার এক মাস পেরিয়ে গেলেও তাদের আট দফা দাবির বাস্তবায়ন করা হয়নি। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ হামলার শিকার হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মন্দির ভাঙচুর করা হচ্ছে, অথচ অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।
সনাতন সম্প্রদায়ের আট দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, সরকার পতনের পর সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনাগুলো দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচার করা, সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে হিন্দু ফাউন্ডেশনে উন্নীত করা, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকেও ফাউন্ডেশনে উন্নীত করা, দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন যথাযথ বাস্তবায়ন, দুর্গাপূজায় ছুটি পাঁচ দিন করা।