মোঃ সম্রাট আলাউদ্দিন, ধামরাই (ঢাকা) : ঢাকার ধামরাই উপজেলার রোয়াইল ইউনিয়নের আটিমাইঠান গ্রামে ক্যাপসিকাম চাষ করে বাজিমাত করেছেন হাবিব নামের এক শিক্ষিত যুবক। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে একাউন্টিং বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করে চাকরির পেছনে না ছুটে কৃষি পেশায় নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন হাবিব।চাষ তো দূরের কথা এখনো আটিমাইঠান গ্রামের মানুষ ক্যাপসিকামের নামটাও ঠিকমতো জানে না। কীভাবে খেতে হয়, কোথায় কীভাবে বিক্রি হয়। কিন্তু সে গ্রামেরই যুবক হাবিব ক্যাপসিকাম চাষ করে ধামরাই উপজেলায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।হাবিব জানায় আমি চার বছর ধরে ক্যাপসিকাম চাষ করছি। এবছর ফলন ভালো হয়েছে ক্যাপসিকাম বিক্রি করে অনেক লাভবান হবো মনে হয়।
বাজারে এবার দাম ভালো এভাবে দাম ভালো থাকলে আগের তুলনায় বেশি লাভের আশা করছি, আগামী তিন মাসেই ০৮ লাখ টাকার ক্যাপসিকাম বিক্রি করতে পারবো ইনশাআল্লাহ। ক্যাপসিকাম ক্ষেতে পেপের চারা লাগিয়েছি, ক্যাপসিকামের ফলন শেষ হয়ে গেলে তখন পেঁপের ফলন শুরু হবে।এগুলো ছাড়াও আমি স্কোয়াশ ও রকমেলন চাষ করছি।প্রথমদিকে অনেকের মুখেই শুনেছি উদ্ভট, পাগলামি, জমি নষ্ট, ফালতু জিনিস চাষ, ফল হবে, খরচ উঠবে না নানান কথা। এখন আমার সাফল্য দেখে অন্য চাষিদের কাছে ক্যাপসিকাম একটি স্বপ্নের ফসল।
ইতিপূর্বে এ এলাকার মানুষ ক্যাপসিকাম চাষ সর্ম্পকে জানতো না। এখন প্রতিদিনই ভিড় হয় জমির ক্যাপসিকাম দেখতে এবং চাষ শিখতে।হাবিব আরও বলেন, প্রথমে আমি ২০ শতক জমিতে ক্যাপসিকাম চাষ শুরু করি, চারা, মালচিং পেঁপার, বাঁশ-খুটি, নেট, সার এর ব্যবহার ইন্টারনেট থেকে দেখে দেখে শিখেছি। ভালো ফলাফল পাওয়ায় পরের বছর ক্যাপসিকাম চাষ করি প্রায় দেড় বিঘা জমিতে। এবছর আমি আড়াই বিঘা জমিতে প্রায় ১৪ হাজার চারা রোপন করেছিলাম। ক্যাপসিকামের বীজ এনেছি ভারত থেকে। এবার পরিচর্যা ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গাছের চারা কোনো ক্ষতি হয়নি। গাছ থেকে ফল সংগ্রহ চলছে। প্রতি গাছে এখন ৮ থেকে ১০ টি ফল আছে। ৫-৬টি ফলে এক কেজি হচ্ছে। পাইকারি এই ফল ঢাকা সহ বিভিন্ন জেলায় পাইকারদের অর্ডারে পাঠিয়ে দেই ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দামে।জানা গেছে, খাবারে বাড়তি স্বাদ যোগ করতে ক্যাপসিকাম ব্যবহার করা হয়। বাজারে সবুজ, লাল, হলুদ এই তিন রঙের ক্যাপসিকাম পাওয়া যায়। প্রতি ১০০ গ্রাম ক্যাপসিকামে ৮৬০ মিলিগ্রাম প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও ভিটামিন সি থাকে। এ
ছাড়া এতে ভিটামিন বি, ই, কে, থিয়ামিন, ফলিক অ্যাসিড, রাইবোফ্লাভিন ইত্যাদি পাওয়া যায়। সবুজ ক্যাপসিকাম একটু অল্প বয়সীদের জন্য উপকারী। এতে ক্যাপসাইসিনস নামক এক ধরনের উপাদান থাকে, যা ডিএনএর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদানের সংযুক্ত হওয়াতে বাধা দেয়। এটি ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে। এ ছাড়া ক্যাপসিকাম মাইগ্রেন, সাইনাস, সংক্রমণ, দাঁতে ব্যথা ইত্যাদি ব্যথা দূর করে।ক্যাপসিক্যাম ক্ষেতে আসা দর্শনার্থী খালেদ বিন আব্দুল আজিজ বলেন, নতুন একটি সব্জি চাষ করেছে আমাদের ধামরাইয়ে ছোট ভাই হাবিব দেখে খবুই ভালো লাগছে, এবং অনেক লাভবান ও হচ্ছে সে।ধামরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুর রহমান, জানান, ক্যাপসিকাম চাষে ধামরাইয়ে ৫/৬ জন তরুন উদ্যোগক্তা অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন।
আমদানি ক্যাপসিকামের তুলনায় আমাদের উৎপাদিত ক্যাপসিকামের গুণগত মান অনেক ভালো। ফলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এটি বিদেশে রফতানির সম্ভাবনা রয়েছে। আগামীতে পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ এই চাষ বাড়াতে পরামর্শের পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকার কৃষককে ক্ষেতে এনে উৎসাহিত করা হবে।