সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি || ঢাকার সাভারে রাজধানীর মিরপুরের মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) শিক্ষার্থী শাইখ আসহাবুল ইয়ামিনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে হত্যা মামলা করা হয়েছে।
রোববার ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুল ইসলামের আদালতে এ মামলা করেন নিহতের মামা আব্দুল্লাহ আল কাবির। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে সাভার থানাকে এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।
সাভারে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহতদের ঘটনায় এ ১১টি মামলা দায়ের হলেও এই প্রথম আদালতে দায়েরকৃত মামলায় সাভারে জড়িত পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।
নিহত শাইখ আসহাবুল ইয়ামিন এমআইএসটির কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। বাদীপক্ষে মামলা দায়ের করেন অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান মারুফ ও সাকিল আহমাদ।
এ মামলার ১. শেখ হাসিনা (৭৬), সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্বামী-মৃত ওয়াজেদ মিয়া। ২. আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ৩. ওবায়দুল কাদের (৭৪), সাবেক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রী পিতা-মৃত মোশারফ হোসেন। ৪. আব্দুল্লাহ আল মামুন সাবেক আইজিপি। ৫. আসাদুজ্জামান, এসপি-ঢাকা। ৬. আব্দুল্লাহহিল কাফি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস ও ট্রাফিক, উত্তর বিভাগ) ঢাকা। ৭. সাহিদুর রহমান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাভার সার্কেল, ঢাকা। ৮. মোঃ শাহ জামান ওসি, সাভার থানা। ৯. সুদীপ, এসআই সাভার থানা। ১০. হারুন অর রশিদ এস আই সাভার থানা। ১১. সাব্বির এসআই সাভার থানা। ১২. বাবুল শরিফ (শুটার লাল গেঞ্জি)। ১৩. ঘটনার দিন অজ্ঞাত সাভার ও আশুলিয়া থানায় কার্মরত ও ঢাকা জেলা পুলিশ লাইন হইতে আগত অজ্ঞাত সংখ্যাক রায়েট পুলিশ সদস্য এবং পুলিশের বিভিন্ন বিশেষায়িত সংস্থার সদস্য। ১৪. মঞ্জুরুল আলম রাজিব, চেয়ারম্যান-সাভার উপজেলা। ১৫. ফখরুল আলম সমর, চেয়ারম্যান-তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদ। ১৬. মোঃ সাইফুল ইসলাম, সংসদ সদস্য-ঢাকা-১৯। ১৭. মোঃ লিয়াকত হোসেন, চেয়ারম্যান-ভাকুর্তা ইউপি। ১৮. মোঃ জাকির হোসেন ওরফে ট্যাপা জাকির, ওরফে, হিজরা জাকির, ওরফে ভাগিনা জাকির, ব্যাবস্থাপনা পরিচালক-রাজ গ্রুপ। ১৯. আতিকুর রহমান আতিক, সাবেক সভাপতি সাভার উপজেলা ছাত্রলীগ। ২০. মাজাহারুল ইসলাম রুবেল, পিতাঃ রফিকুল ইসলাম, সাং, নামাগেন্ডা, ব্যাংক টাউন, সাভার, ঢাকা। ২১. মো মেহেদী হাসান তুষার, পিতাঃ আব্দুল গনি, সাং ব্যাংক কলোনি, সাভার। ২২. সাইদুর রহমান সুজন, সাবেক চেয়ারম্যান বিরুলিয়া ইউপি। ২৩. ফারুক হাসান তুহিন, সভাপতি আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগ। ২৪. শাহীন, পিতা-আব্দুল গণি সাং-ব্যাংক কলোনী, সাভার। ২৫. মোঃ রাজু, পি এস, উপজেলা চেয়ারম্যান (রাজিব) ২৬. আব্দুল গনি, মেয়র-সাভার পৌরসভা। ২৭. মাসুদ চৌধুরী, সহ-সভাপতি ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ। ২৮. নুরে আলম সিয়িাকি নিউটন কাউন্সিলর ৪নং ওয়ার্ড, সাভার পৌরসভা। ২৯. শেখ আবুল কালাম আজাদ, পিতাঃ মৃত শেখ আব্দুর রহমান সাং-দক্ষিণপাড়া, সাভার, ঢাকা। ৩০. মোঃ রাজীব মাহমুদ, পিতাঃ তোফাজ্জল হোসেন সাং-ছাপড়া মসজিদ, ব্যাংক কলোনি, সাভার। ৩১. নজরুল ইসলাম মানিক মোল্লা, কাউন্সেলর ২নং ওয়ার্ড, সাভার পৌরসভা। ৩২. কুটি মোল্লা, পিতাঃ মৃত ইব্রাহিম মোল্লা, আড়াপাড়া, সাভার, ঢাকা। ৩৩. সেলিম মন্ডল, চেয়ারম্যান-বিরুলিয়া ইউপি। ৩৪. আহাম্মেদ রুবেল, পিতাঃ তোফাজ্জল হোসেন, সাং, ছাপড়া মসজিদ, ব্যাংক কলোনি। ৩৫. কৃষ্ণ পাল, পিতাঃ নকুল পাল, সাং, পালপাড়া, সাভার, ঢাকা। ৩৬। নয়ন পাল, পিতাঃ নকুল পাল, সাং, পালপাড়া, সাভার, ঢাকা। ৩৭. শাকিল, পিতাঃ সিরাজুল ইসলাম সিরু, সাং কাজী মোকমাপাড়া, সাভার, ঢাকা। ৩৮. মিজানুর রহমান মিজান ওরফে জি এস মিজান, পিতাঃ আব্দুর রাজ্জাক, সাং তালবাগ, থানা রোড, ঢাকা। ৩৯. নিজামউদ্দিন টিপু, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, সাভার উপজেলা ছাত্রলীগ। ৪০. মোঃ সেলিম, পিতাঃ অজ্ঞাত, সাং-চারিগ্রাম, পাথালিয়া, আশুলিয়া, ঢাকা। ৪১. আরিফ ভূইয়া, পিতাঃ আব্বাস আলী ভূঁইয়া, সাং-যাদুরচর, হেমায়েতপুর, সাভার, ঢাকা। ৪২. মো নাছির উদ্দিন লিটন, পিতাঃ হোসেন আলী ওরফে হোসেন কমিশনার, সাং-তালবাগ, থানা রোড, সাভার, ঢাকা। ৪৩. ইয়াকিন ইয়াসার, পিতাঃ অজ্ঞাত, সাং-থানা রোড, সাভার, ঢাকা (জি এস মিজানের ভাগিনা)। ৪৪. সোহান, পিতাঃ অজ্ঞাত, সাং-কালিয়াকৈর, সাভার, ঢাকা (নাছির উদ্দিন লিটনের ভাগিনা)। ৪৫. আতাউর রহমান অভি, পিতাঃ অজ্ঞাত, সাং-রাজাশন, সাভার, ঢাকা। ৪৬. রকি আহাম্মেদ, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাভার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রলীগ পিতাঃ অজ্ঞাত সাং-ব্যাংক কলোনি, সাভার (ফারুক হাসান তুহিনের ক্যাডার)। ৪৭. আহাম্মেদ ফয়সাল নাইম তুর্জ, পিতা-আবু আহাম্মেদ নাসীম পাভেল, ইমান্দিপুর, সাভার।
মামলার আর্জিতে উল্লেখ করা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে মামলার আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলন প্রতিহত করার জন্য উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান করেন। এতে তিনি বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের আন্দোলনকারীদের নির্মূলের নির্দেশ দেন।
আসামি ওবায়দুল কাদের তার বক্তব্যে বলেছিলেন-আন্দোলনকারী ছাত্রদের নির্মূল করার জন্য ছাত্রলীগই যথেষ্ট। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৮ জুলাই পুলিশ ও আওয়ামী লীগ সম্মিলিতভাবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা করে। তারা শাইখ আসহাবুল ইয়ামিনকে ধরে টেনে পুলিশের সাঁজোয়া যানের কাছে নিয়ে দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে বুকের বাম পাশে গুলি করে। গুলিতে ইয়ামিনের বুকের বাঁ পাশে অসংখ্য স্পিøন্টার বিদ্ধ হয়। এতে তিনি ঘটনাস্থলেই নিহত হয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাকিজা নামক স্থানে পড়ে থাকে দীর্ঘক্ষণ। পরে স্বজনরা খবর পেয়ে তার লাশ নিয়ে যান।