নিজস্ব প্রতিবেদক, মানিকগঞ্জঃ সম্পদশালী ব্যবসায়ী কিংবা সরকারী চাকরিজীবী যুবকদের টার্গেট করে প্রেমের ফাঁদে ফেলে অন্তরঙ্গ মুহুর্তের ছবি ও ভিডিও চিত্র ধারণের পর ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ে। বিয়ের নামে বহু পুরুষকে ফাঁদে ফেলে অর্থ-সম্পদ লুট, প্রতারণা-জালিয়াতি ও নিরীহ লোকদের মামলায় ফেলে হয়রানিসহ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ উঠেছে মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর থানার খলসী গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদের মেয়ে বহুলালোচিত নারী মৌসুমী বেগম (৩০) অরফে ফিটিং মৌসুমীর বিরুদ্ধে। তার ফাঁদে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন একাধিক ব্যক্তি। তার এই ফাঁদে থেকে রক্ষা পাইনি পুলিশ সদস্য ও বিজিবি সদস্যও।
তার প্রতারণা ও জালিয়াতিসহ অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরে তাকে গ্রেফতার এবং কঠোর শাস্তির দাবিতে জানিয়েছে একাধিক ভুক্তভোগী।
জানা যায়, মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর থানার খলসী গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদের মেয়ে বহুলালোচিত নারী মৌসুমী বেগম (৩০) অরফে ফিটিং মৌসুমীর এ পর্যন্ত ফিটিং দিয়ে ৮ এর অধিক বিয়ে করেছেন। বিয়ে করে কিছুদিন পর সেই স্বামীকে ছেড়ে দেওয়া এবং তার কাছ থেকে দেনমোহরের টাকাসহ নানা কৌশলে বাড়ি-গাড়ি হাতিয়ে নেওয়াই তার ব্যবসা। তার মূল টার্গেট সম্পদশালী ব্যবসায়ী, উচ্চপদস্থ চাকরিজীবী ও প্রবাসী পুরুষ। প্রথমে টার্গেট নিশ্চিত করে তিনি ধীরে ধীরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে নিজ দেহের সৌন্দর্য ও কথা মালার মারপ্যাঁচে আটকে ফেলেন টার্গেটকৃত পুরুষদের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৫ সালে মৌসুমী বেগমের প্রথম বিয়ে একই এলাকার ছিদ্দিক নামের এক ব্যক্তির সাথে। বিয়ের কিছুদিন পর সহিদুল নামের এক ব্যক্তির সাথে অবৈধ কাজে লিপ্ত থাকা অবস্থায় হাতেনাতে ধরা পরার পর বিবস্ত্র অবস্থায় মারপিট করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়। পরে মানিকগঞ্জ জেলার ট্যাবরা গ্রামের সুমন নামের এক ছেলেকে বিয়ে করে সাভারের ছায়াবিথি এলাকায় একটি বাড়িতে ভাড়া থাকা অবস্থায় পরিচয় হয় মাদক ব্যবসায়ী হাবিব এর সাথে। কিছুদিন পরে বিয়ে করে মাদক ব্যবসায়ী হাবিবকে। মাদক ব্যবসায়ী হাবিবকে নিয়ে সাভারের ব্যাংকটাউন এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতো। এদিকে মাদক ব্যবসায়ী হাবিব মাদক সহ ব্যাংকটাউন এলাকা হতে পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর জেলখানায় গিয়ে পরিচয় হয় ঢাকা জেলার ধামরাই থানার বান্নল গ্রামের বাসিন্দা জেল পুলিশে কর্মরত এরশাদ হোসেন এর সাথে পরে কৌশলে তাকে ফাঁদে ফেলে বিয়ে করে কিছুদিন যেতেই তার নামে মামলা দিয়ে তাকে হয়রানি করে তার কাছে টাকা দাবি করে। এর কিছুদিন পরেই পরিচয় হয় মানিকগঞ্জ জেলার ভবানীপুর গ্রামের বিজিবিতে চাকুরীরত সজিব এর সাথে সজিব কে ফিটিং দিয়ে তার কাছ থেকে তিন লাখ টাকা আদায় করে মৌসুমী। এছাড়াও খলশী গ্রামের যদু নামের এক ব্যক্তির সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে তার বাড়িতে গিয়ে বিবাহের দাবিতে অনশন করে তার কাছথেকে টাকা আদায় করে ফিরে আসে। এ ছাড়াও সবার কাছথেকে কিছুদিন যেতে না যেতেই নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার নিয়ে বেরিয়ে যায় তিনি। তার উশৃঙ্খল জীবনযাপন ও অনেককে হয়রানির ঘটনায় বিভিন্ন থানায় সাধারণ ডায়েরী ও একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
এ ছাড়াও ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে তার সঙ্গীয় লায়না নামক আরেক ফিটিংবাজ অরফে পতিতা লায়লাকে নিয়ে টাকার বিনিময়ে পতিতাবিত্তি করে। এবং পতিতাবিত্তি শেষে ঘিওর থানা পুলিশকে ভূল বুঝিয়ে তাদের ৮ জনের নামে ধর্ষণের অভিযোগ করে মামলা দিয়ে জেলহাজতে পাঠায়। এবং এর পর থেকে আসামীদের পরিবারের কাছথেকে মোটা অংকের টাকা দাবী করে আসছে এমনকি টাকা দিলে তাদের সাথে আপোষ-মিমাংসা করবে বলে জানায়। এভাবে একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করে কিছুদিন অতিবাহিত করার পর তাদের প্রতি জুলুম, নির্যাতন, অত্যাচার, মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বিগত প্রত্যেক স্বামী কর্তৃক তালাকপ্রাপ্ত হওয়ার পর তাদের বেকায়দায় ফেলতে তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও দায়ের করেছে।
এছাড়াও পূর্বের তারিখ দিয়ে অবৈধ নিকাহ রেজিস্টার দ্বারা প্রতারণার মাধ্যমে বিবাহ সম্পাদিত করেন তিনি। বিয়ের পর সংসার পরিচালনার নামে অত্যন্ত সুকৌশলে নিজের খরচ বাবদ টাকা, দেনমোহরের টাকা এবং স্বামীর নামীয় ফ্ল্যাটবাড়ি নিজ নামে রেজিস্ট্রি করে নেওয়ার জন্য স্বামীদের ওপর বিভিন্নভাবে অত্যাচার নির্যাতন চালান। এমনকি বিয়ের কাবিননামায় টাকার অংক পরিবর্তন করে মোটা অংকের টাকা বসিয়ে দেন। এ অবস্থায় তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ না নিলে তিনি এভাবে একের পর এক বহু পুরুষকে ফাঁদে ফেলে তাদের অর্থ-সম্পদ লুটে নেবে।
অবিলম্বে তাকে গ্রেফতার পূর্বক তার সব অপকর্ম তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট কঠোর শাস্তির দাবি করেন ভুক্তভোগীরা।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মৌসুমী বেগম অরফে ফিটিং মৌসুমীর সাথে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তার সবকয়টি নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।