নোয়াখালী : নোয়াখালীতে পুরুষ মুসল্লিদের পাশাপাশি নারী-শিশুদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়েছে পবিত্র ঈদুল আজহার জামাত। জেলার সোনাইমুড়ী উপজেলার পোরকরা গ্রামে ব্যতিক্রমী এই ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। জামাতে কয়েকশো নারী সহ শিশুদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মত।
জানা যায়, কয়েক বছর থেকে প্রতি ঈদে পোরকরা গ্রামের চাষীরহাট নুরুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে এই আয়োজন করা হয়। এবারেও তার ব্যতিক্রমী হয়নি। বরং গত ঈদুল ফিতরের চেয়ে এবার বেড়েছে নারী মুসল্লীদের সংখ্যা। জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও আশপাশের জেলা ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, কুমিল্লা থেকে মুসল্লিরা জামাতে অংশ নিয়ে থাকেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকেই মুসল্লিরা আসছেন ঈদগাহে। নতুন পোশাক পড়ে পুরুষ মুসল্লিদের সাথে আসছেন তাদের স্ত্রী ও সন্তানেরা। ঈদগাহের পুরুষ ও নারীদের জন্য আলাদা স্থান নির্ধারণ করা আছে। তিনপাশে কাপড় ও ওপরে ছাউনি দিয়ে পেন্ডেল করা হয়েছে নারীদের জন্য। সেখানে রয়েছে বৈদ্যুতিক ফ্যানের ব্যবস্থা। এছাড়া খাবার পানি, ওয়াশরুমের ব্যবস্থাও রয়েছে আলাদা ভাবে। নারীদের যে কোন সমস্যা সমাধানের জন্য প্যান্ডেলের ভেতরে রয়েছে নারী স্বেচ্ছাসেবী।
নারী প্যান্ডেলের একজন স্বেচ্ছাসেবী তাসলিমা আক্তার। তার স্বামীর বাড়ি পোরকরা গ্রামেই। তিনি জানান, দুই বছর থেকে চাষীরহাট নুরুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে ঈদের জামাতের আয়োজন করা হচ্ছে। এখানে নারীদের নিরাপত্তা ও নামাজের সু-ব্যবস্থা থাকায় অনেকেই জামাতে নামাজ পড়তে আসেন। শিশু, কিশোরী, যুবতী, বৃদ্ধা সকল বয়সের নারীরাই এখানে আসছেন। অনেক মহিলারা জীবনে কখনো ঈদের নামজ পড়তে পারেনাই। তারা এখানে এসে জামাতে নামাজ পড়তে পেরে অনেক খুশি হয়। মহানবী হযরত মোহাম্মদ সাঃ এর সময় নারীরা জুম্মার নামাজ, ঈদের নামাজ এমনকি হজ্ব করতো। এখনো নারীরা হজ্ব করে কিন্তু নামাজের ক্ষেত্রে অনেক জায়গায় বাধা দেওয়া হয়। তবে ইসলামে- কোরআনে নারীদের এমন কোন বাধা দেয়নি।
সকাল ৮টা থেকে মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে ঈদগাহের মেম্বার থেকে খুতবা দেন হেযবুত তওহীদের ইমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। তিনি মুসল্লিদের সামনে হজ্ব ও কোরবানির উদ্দেশ্য তুলে ধরেন। হজ্বের বিষয়ে তিনি বলেন, বছরে একবার মোসলমান জাতি কাবার সামনে ঐক্যবদ্ধ হয়। হজ্ব ঐক্যের শিক্ষা দেয়, ঐক্যবদ্ধ না হলে মুসলিম জাতির নির্যাতন থেকে বাঁচার আর কোন পথ নাই।
কোরবানির উদ্দেশ্যে বলেন, কোরবানি হচ্ছে আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের মাধ্যম। আল্লাহ বলেছেন, পশুর রক্ত-মাংস আল্লাহর কাছে পৌছায়না। পৌছায় তাকওয়া, খোদাভীতি। আসল কোরবানি আখেরী নবী মোহাম্মদ সাঃ আমাদের দেখিয়ে গিয়েছেন। তারা আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য রণাঙ্গনে শহীদ হয়েছেন। সুদ, ঘুষ, অর্থ পাচার, ধাপ্পাবাজি করে গরু জবাই দিলেই কোরবানি হয় না। নিজের ভেতরের পশুত্বটাকে কোরবানি দিতে হবে। ওটাকে কোরবানি দিলেই প্রকৃত কোরবানি হবে।
ঈদের নামাজ শেষে মুসলিম জাতির ঐক্য ও সমৃদ্ধির জন্য দোয়া করা হয়। নামাজ শেষে মুসল্লিদের কোলাকুলি, শিশুদের কোলাহলে এক আনন্দঘর পরিবেশের সৃষ্টি হয় ঈদগাহ জুড়ে। এসময় ইমাম সাহেব মুসল্লিদের সাথে মোলাকাত করেন। পরে মুসল্লিদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়।